<p><strong><span style="color:#e74c3c">ভাবসম্প্রসারণ</span></strong></p> <h3><span style="color:#e74c3c">মানুষ বাঁচে তাহার কর্মের মধ্যে, বয়সের মধ্যে নয়</span></h3> <p>ভাবসম্প্রসারণ : অনন্তকাল প্রবাহে মানুষের জীবন খুবই সংক্ষিপ্ত। সংক্ষিপ্ত এই সময়ে মানুষ মহৎ কর্মের মাধ্যমে মৃত্যুর পরেও স্মরণীয় হয়ে থাকতে পারে। সেখানে বয়স কোনো বিষয় নয়, কর্মই মূল বিবেচ্য বিষয়।</p> <p>পৃথিবীতে যেসব মহৎ হৃদয়ের মানুষ মানবহিতৈষী-ব্রতে আত্মোৎসর্গ করেছেন, যাঁরা অন্যের দুঃখ মোচনের জন্য যথাসর্বস্ব ত্যাগ স্বীকার করেছেন, যাঁরা হৃদয়ের মহত্ত্বে ও চরিত্রের ঔদার্যে মানুষকে মহৎ জীবনের সঙ্গে পরিচালিত করেছেন, তাঁরা মানবজাতির কাছে চিরস্মরণীয় ও সদাবরণীয় হয়ে আছেন। কিশোর কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যেরই কথা ধরা যাক। তিনি মাত্র ২০ বছর ৯ মাস ১৩ দিন এ নশ্বর প্রথিবীতে বেঁচেছিলেন। কিন্তু তাঁর কবিতাসহ সৃজনশীল বিভিন্ন লেখার কারণে এখনো মানুষের মনের মধ্যে অমর হয়ে আছেন। আবার বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ৮০ বছর বয়স পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের সৃজনশীল কবিতা, গল্প, নাটক, উপন্যাস, প্রবন্ধ ইত্যাদি লিখে গেছেন। ফলে তিনিও মানুষের মনে অমর হয়ে আছেন। এভাবে দেশ-বিদেশে অনেক কবি, সাহিত্যিক, নোবেল বিজয়ী, বিজ্ঞানী, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক, গবেষক, সমাজ সংস্কারক, খেলোয়াড় রয়েছেন; যে কেউ অল্প বয়সী, আবার কেউ হয়তো সর্বোচ্চ ১০০ বছর জীবন অতিবাহিত করেছেন। তাঁরা কেউই অল্প বয়স কিংবা বেশি বয়সের কারণে সুনাম অর্জন করেননি; বরং তাঁরা কল্যাণমূলক কর্মের কারণে অমর, অক্ষয়, অব্যয় হয়ে মানুষের  মনে যুগ যুগ ধরে, শতাব্দী শতাব্দী ধরে কিংবদন্তি হয়ে কালজয়ী হন। তাই প্রসঙ্গত ইংরেজি প্রবাদটি প্রণিধানযোগ্য : ‘Man does not live in years but in deeds.’</p> <p>বয়স মানুষের জীবনের সার্থকতার মাপকাঠি নয়, মহৎ কীর্তির মাধ্যমেই মানুষের জীবন সার্থক ও সফল হয়।</p> <p><span style="color:#e74c3c">ভোগে সুখ নাই, ত্যাগেই প্রকৃত সুখ ভাবসম্প্রসারণ<strong> : </strong></span>ভোগ-বিলাসিতায় প্রকৃত সুখ পাওয়া যায় না, প্রকৃত সুখ আসে আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে। আর ত্যাগ মানুষের মধ্যে মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটায়।</p> <p> ভোগ ও ত্যাগ মানবের আত্মাবনতি ও আত্মমুক্তির রক্তাক্ত দলিল। ভোগাকাঙ্ক্ষা মানবের সীমাহীন দুঃখের কারণ। ত্যাগ মানুষকে রিক্ত করে না; বরং পূর্ণতাই এনে দেয়। অন্যের হিতার্থে যিনি নিজের জীবন অকাতরে বিলিয়ে দেন, মৃত্যুর পরে তিনি আরো বড় মানুষ হিসেবে অমর হয়ে থাকেন। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায়—‘নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান, ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই।’ আমরা যখন ভোগের জীবনযাপন করি, তখন শুধু নিজের জন্য বাঁচি। এই বাঁচা মৃত্যুর সঙ্গে সবই শেষ হয়ে যায়। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে—মমতাজ উদদীন আহমদের ‘সুখী মানুষ’ নাটিকার প্রতীকী চরিত্রে মোড়লকে দেখা যায় যে অন্যের ক্ষতি করে সে স্বার্থপর, লোভী ও ভোগ-বিলাসে মত্ত থাকার জন্য তার হাড়মড়মড় রোগ হয়। ফলে পরবর্তী জীবনে তার খুবই কষ্ট হয়। তাই আমরা যখন ত্যাগের জীবনযাপন করি, তখন যেন পরের জন্যও বাঁচি। জীবনের ত্যাগ থাকলে জীবন অর্থবহ হয়। ত্যাগের মনোভাব মানুষকে মহৎ করে তোলে, অন্তরকে অপার আনন্দে পূর্ণ করে দেয়। অসহায়, বিপন্ন ও দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের কল্যাণে তাদের পাশে দাঁড়াতে পারলে অন্তরে  অনির্বচনীয় শান্তি ও সুখের ফল্গুধারা বয়ে যায়। তাই ত্যাগ আমাদের চরিত্রের সর্বোচ্চ আদর্শ হওয়া উচিত। ত্যাগের মাধ্যমে সৃষ্টির সর্বশ্রেষ্ঠ প্রাণী মানুষ অমরত্ব লাভ করতে পারে। ত্যাগ মহাশক্তি। অন্যদিকে ভোগ হচ্ছে লক্ষ ফণা সাপের মতো। তাকে পদদলিত করা আমাদের কর্তব্য। ভোগাকাঙ্ক্ষার নিবৃত্তি না হওয়া পর্যন্ত আমরা সার্থক মানুষ হিসেবে নিজেদের পরিচয় দিতে পারব না। যে ত্যাগ করতে জানে, ভোগের অধিকার তারই জন্মে।</p> <p>নিঃস্বার্থভাবে অন্যের জন্য জীবন বিলিয়ে দেওয়ার মধ্যেই জীবনে আসে চরম সার্থকতা। তাই ভোগকে পরিহার করে ত্যাগকে স্বাগত জানানো উচিত।</p>