<p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ভারতের উত্তর প্রদেশের সম্ভল শহরে মোগল আমলের শাহি জামে মসজিদের সমীক্ষা আপাতত স্থগিত রেখেছেন দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। সেখানে শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গতকাল শুক্রবার দেশটির প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না ও বিচারপতি সঞ্জয় কুমারের বেঞ্চ এই নির্দেশ দিয়েছেন। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছেন, সম্ভলের শাহি জামে মসজিদের সমীক্ষা নিয়ে আপাতত কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না নিম্ন আদালত। বরং সমীক্ষার নির্দেশ নিয়ে হাইকোর্টে আবেদন করতে হবে মসজিদ কর্তৃপক্ষকে। হাইকোর্টে যত দিন না এই মামলার শুনানি হচ্ছে, তত দিন মসজিদের সমীক্ষা নিয়ে নিম্ন আদালত কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না।  </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না বলেছেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘‌</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">শান্তি ও সম্প্রীতি নিশ্চিত করতে হবে। আমরা মামলাটি মুলতবি রাখব। কোনো কিছু ঘটুক তা আমরা চাই না। আমাদের সম্পূর্ণভাবে নিরপেক্ষ থাকতে হবে। নিশ্চিত করতে হবে, অপ্রীতিকর কোনো কিছু যেন না ঘটে।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">উত্তর প্রদেশের এলাহাবাদ হাইকোর্টকে মসজিদ ব্যবস্থাপনা কমিটির দায়ের করা আবেদন প্রাপ্তির তিন কার্যদিবসের মধ্যে শুনানির নির্দেশ দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট। আদালত উল্লেখ করেছেন, আগামী বছরের ৮ জানুয়ারির জন্য নির্ধারিত ট্রায়াল কোর্টের শুনানি হাইকোর্ট বিষয়টি পর্যালোচনা না করা পর্যন্ত তা স্থগিত থাকবে।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কয়েক দিন আগেই অশান্তির আগুনে পুড়েছে সম্ভল। ওই সময় শাহি জামে মসজিদের সমীক্ষা চলাকালে উত্তেজিত জনতা ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। সংঘর্ষের জেরে মৃত্যু হয় চারজনের। এদিকে গতকাল সম্ভলে যেন নতুন করে কোনো উত্তেজনা সৃষ্টি না হয়, তার জন্যে ড্রোন উড়িয়ে নজরদারি চালিয়েছে পুলিশ। সেখানে পরিস্থিতি বিগত দিনগুলোতে থমথমে থাকলেও গতকাল কোনো সহিংসতার ঘটনা ঘটেনি। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">গত ২৪ নভেম্বর সম্ভল শহরে নতুন করে শাহি জামে মসজিদের সমীক্ষার কাজ শুরু করা হয়। আদালতের নির্দেশেই মোগল আমলের এই মসজিদে সমীক্ষা চালানো হচ্ছিল। গত রবিবার সকালে ওই এলাকায় পৌঁছেন সমীক্ষা দলের সদস্যরা। সেই দলে ছিলেন জেলা শাসক রাজেন্দ্র পানসিয়া, পুলিশ সুপার কৃষ্ণ বিষ্ণোই, মহকুমা শাসক বন্দনা মিশ্রা, সার্কেল অফিসার অনুজ চৌধুরী ও তহশিলদার রবি সোনকর। সমীক্ষা চলাকালে যেন কোনো অশান্তি না ছড়ায় তা নিশ্চিত করতে পুলিশের বিশাল বাহিনী এবং র‌্যাপিড অ্যাকশন ফোর্সও মোতায়েন করা হয়েছিল সেখানে। তবে পুলিশ নিয়ে সমীক্ষকরা সেই এলাকায় পৌঁছতেই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এরপর শুরু হয় সংঘর্ষ। পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথর ছুড়তে শুরু করে স্থানীয়রা। একের পর এক গাড়িতে আগুন লাগানো হয়। সেই সময় হামলাকারীদের কেউ কেউ গুলিও চালায় বলে অভিযোগ। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সম্ভলের শাহি জামে মসজিদ নিয়ে একটি মামলা করেন আইনজীবী বিষ্ণু শংকর জৈন ও অন্যরা। সম্ভলের স্থানীয় আদালতে করা মামলায় দাবি করা হয়, সেখানকার শাহি জামে মসজিদ মোগল সম্রাট বাবরের আমলে হরিহর মন্দির ভেঙে তৈরি করা হয়েছিল। গত ১৯ নভেম্বর মামলা দায়েরের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই নিম্ন আদালতের বিচারক আদিত্য গোস্বামী কমিশনার নিয়োগ করে মসজিদে সেই দিনই সমীক্ষার নির্দেশ দেন। কোট গারভী এলাকায় প্রথম দিনের সমীক্ষা নির্বিঘ্নেই করা হয়েছিল। কিন্তু গত রবিবার দ্বিতীয়বার সমীক্ষার সময়ে উত্তেজনা ছড়ায়। উত্তেজিত জনতা ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সমাজবাদী পার্টির স্থানীয় সংসদ সদস্য জিয়াউর রহমান বর্কের বিরুদ্ধে উত্তর প্রদেশ পুলিশ এই ঘটনায় উসকানির অভিযোগে এফআইআর করেছে। এই পরিস্থিতিতে শাহি জামে মসজিদ চত্বরে সমীক্ষার নির্দেশের বিরোধিতা করে মসজিদ কমিটি সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপ চেয়ে আবেদন করে। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">শাহি জামে মসজিদ কমিটির দাবি, ১৯৯১ সালের উপাসনাস্থল (বিশেষ ব্যবস্থা) আইনে স্পষ্ট বলা হয়েছে, কোনো মন্দির, মসজিদ বা গির্জার চরিত্র পাল্টানো যাবে না। ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার সময় যেখানে যা ছিল, তেমনটাই রাখতে হবে। দেশের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্র বজায় রাখতে তৈরি আইনে শুধু অযোধ্যার রাম জন্মভূমির বাবরি মসজিদকে এই আওতার বাইরে রাখা হয়েছিল। অর্থাৎ স্বাধীনতার আগে কোনো মন্দির ভেঙে মসজিদ হয়ে থাকলেও এখন যেখানে মসজিদ রয়েছে, সেখানে মসজিদই থাকবে। এই নীতি মেনে চললে, কোনো মসজিদ আগে মন্দির ছিল বলে দাবি উঠলেও সেখানে আর সমীক্ষা করা যায় না। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এদিকে সম্ভলের শাহি জামে মসজিদ ভবনে একসময় হিন্দু মন্দির ছিল এই দাবি আগেও জানিয়ে এসেছে হিন্দুত্ববাদী সংগঠন। শিবরাত্রির সময় ওই প্রাঙ্গণে নির্মিত কূপের পূজা দেওয়ার চেষ্টা করা হয় বলেও মুসলিম সংগঠনের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে। তবে এই প্রথম আদালতে এই মসজিদকে নিয়ে কোনো মামলা করা হয়েছে।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সম্ভলের শাহি জামে মসজিদ ঠিক কবে নির্মাণ করা হয়েছিল তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। হিন্দু পক্ষ আদালতে দাবি করেছে, মোগল শাসক বাবরের নির্দেশে হিন্দু মন্দিরের জায়গায় এই মসজিদ তৈরি করা হয়েছিল। সম্ভলের ইতিহাস </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তারিখ-এ সম্ভল</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> বইয়ের লেখক মাওলানা মঈদ। তিনি বলেছেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বাবর এই মসজিদ মেরামত করিয়েছিলেন। কাজেই এই তথ্য সঠিক নয় যে এই মসজিদ বাবর নির্মাণ করেছিলেন। এটা ঐতিহাসিক সত্য যে ১৫২৬ সালে লোধী শাসকদের পরাজিত করে বাবর সম্ভল সফর করেছিলেন, কিন্তু জামে মসজিদ তিনি নির্মাণ করেননি।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মাওলানা মঈদের মতে, সম্ভবত তুঘলক আমলে তৈরি করা হয়েছিল এই মসজিদ। কারণ তার পর্যবেক্ষণ বলছে, মসজিদের নির্মাণশৈলী মোগল আমলের সঙ্গে মেলে না। ১৯২০ সালে আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া বা পুরাতত্ত্ব বিভাগের অধীনে এই ভবনকে সুরক্ষিত ভবন হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এটা জাতীয় গুরুত্বসম্পন্ন স্থাপনাও বটে।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সূত্র : বিবিসি, এনডিটিভি, আনন্দবাজার পত্রিকা, সংবাদ প্রতিদিন, হিন্দুস্তান টাইমস</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"> </p>