<p>ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় মণিপুর রাজ্যের পরিস্থিতি ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। রাজ্যের তিনটি জেলায় অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ জারির পাশাপাশি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ইন্টারনেট পরিষেবা। তবে কারফিউ উপেক্ষা করেই চলছে বিক্ষোভ। এসব সহিংসতা মোকাবেলায় সেখানে শক্তি বাড়াতে যাচ্ছে মোদি সরকার। সেই পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্র থেকে দুই হাজার সদস্যের আরো দুই ব্যাটালিয়ন পুলিশ পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটি।</p> <p>সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ৫৮ নম্বর ব্যাটালিয়নকে তেলেঙ্গানার ওয়ারাঙ্গল থেকে এবং ১১২ নম্বর ব্যাটালিয়নকে ঝাড়খণ্ডের লাতেহার থেকে পাঠানো হচ্ছে। প্রথম ইউনিটটি মণিপুরের কাংভাইয়ে (চুরাচাঁদপুর) এবং দ্বিতীয়টি ইম্ফলের চারপাশে দায়িত্ব পালন করবে।</p> <p>জম্মু-কাশ্মীর ও উত্তর-পূর্বের অন্যান্য অংশে অপারেশনাল দায়িত্ব পালনের জন্য আসাম রাইফেলসের দুটি ব্যাটালিয়ন মণিপুর থেকে প্রত্যাহারের পর এই পদক্ষেপ নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার।</p> <p>কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে বলা হয়েছে, নতুন এই দুটি ইউনিটের সব কম্পানিকে সংঘাতকবলিত রাজ্যের বিভিন্ন অংশে ঘাঁটি তৈরি করতে হবে। পিটিআইয়ের তথ্য মতে, গত বছরের মে মাস থেকে জাতিগত সংঘাতে মণিপুরে এ পর্যন্ত ২০০ জনের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। এর মধ্যে গত ১০ দিনে নিহত হয়েছে অন্তত ১১ জন। জাতিগত এই সংঘাতের জেরে রাজ্যটিতে আগে থেকেই সিআরপিএফের ১৬টি ব্যাটালিয়ন মোতায়েন ছিল। গত সপ্তাহে তারা ইম্ফল পশ্চিম, ইম্ফল পূর্ব, চুরাচাঁদপুর, ননি, জিরিবাম, কাংপোকপি, বিষ্ণুপুরে অপারেশনাল ঘাঁটি স্থাপন করেছে বলে জানা গেছে।</p> <p>গণমাধ্যমটি জানিয়েছে, সংঘাতের আগে মণিপুরে সাধারণত সিআরপিএফের ১০ থেকে ১১টি ব্যাটালিয়ন মোতায়েন থাকত। কিন্তু এবার তীব্র সহিংসতার জেরে সেটি ১৮টিতে গিয়ে দাঁড়াচ্ছে। মণিপুরে মোতায়েন কেন্দ্রীয় বাহিনীর সদস্যসংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ করতে চলেছে মোদি সরকার।</p> <p>এক শীর্ষ নিরাপত্তা কর্মকর্তা বলেছেন, মণিপুরে প্রধান ভূমিকা পালন করবে সিআরপিএফ। গত বছরের মে মাসে মেইতেই ও কুকি জনগণের মধ্যে সহিংসতা শুরু হওয়ার পর থেকে বাহিনীর নতুন ইউনিটগুলোকে এই রাজ্যে পাঠানো হয়েছিল। এখন বাহিনীকে শক্তিশালী করা হচ্ছে, যেন আরো ভালো সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়।</p> <p>অশান্তি রুখতে দেশটির কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে কড়া ভাষায় চিঠি দিয়েছেন মণিপুরের কংগ্রেস বিধায়ক বিমল আকোইজাম। চিঠিতে অমিত শাহর কাছে সহিংসতা রুখতে ‘কার্যকরী ব্যবস্থা’ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তিনি।</p> <p>স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে মণিপুরের বর্তমান পরিস্থিতিকে ‘নজিরবিহীন সহিংসতা’ বলেছেন আকোইজাম। তিনি লিখেছেন, বর্তমান অবস্থা ১৯৪৭ সালের ভারত ভাগের স্মৃতিকে জাগাচ্ছে। অমিত শাহের কাছে প্রশ্ন রেখে কংগ্রেস নেতা লিখেছেন, ‘মণিপুরে যা চলছে তা গুজরাটে হলে নিশ্চয়ই ভালো লাগবে না স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর। সে ক্ষেত্রে কী করতেন? প্রশাসনের নজরদারির পরও এত বড় সংকট দুঃখজনক।’ তিনি আরো লিখেছেন, ‘বেদনার সঙ্গে আপনাকে মনে করাতে বাধ্য হচ্ছি, একটানা সহিংসতায় কয়েক শ মানুষের প্রাণ ঝরে গেছে। ৬০ হাজার মানুষ বাস্তুহারা। অসংখ্য মণিপুরবাসী ত্রাণশিবিরে দিন কাটাচ্ছেন।’</p> <p>চিঠির শেষ অংশে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে প্রকৃত কার্যকরী ব্যবস্থা নেওয়ার আরজি জানান কংগ্রেস বিধায়ক। তিনি দাবি করেন, সহিংসতায় লাগাম টানতে ঠিকভাবে ব্যবহার করা হোক নিরাপত্তা বাহিনীকে, অবৈধ অনুপ্রবেশকারী বা বিদেশিরা সংঘর্ষে ইন্ধন দিচ্ছে কি না খতিয়ে দেখা হোক, মাদক মাফিয়ারা জড়িত কি না, তাও দেখা হোক। চিঠিতে যেভাবেই হোক মণিপুরে শান্তি ফেরানোর আরজি জানান তিনি। সূত্র : ইন্ডিয়া টুডে, এনডিটিভি</p> <p> </p>