<p>ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বন্যা পরিস্থিতির জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকেই দায়ী করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আবারও তার গলায় শোনা গেল ‘মানবসৃষ্ট বন্যা’র কথা। বুধবার হুগলির পুরশুড়া ব্লকে যান মুখ্যমন্ত্রী। দুপুরে একটি সেতুতে দাঁড়িয়ে প্লাবন দেখে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন তিনি। মমতা জানিয়েছেন, কেন্দ্রে মোদি সরকারের অসহযোগিতা ও উদাসীনতায় পশ্চিমবঙ্গে প্লাবন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। আঙুল তোলেন বহুমুখী নদী উপত্যকা প্রকল্পের (ডিভিসি) দিকেও।</p> <p>মমতা এদিন বলেন, ‘সাড়ে তিন লাখ কিউসেক পানি ছাড়া হয়েছে ডিভিসি থেকে। আমি নিজে ডিভিসির সঙ্গে কথা বলেছি। ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। এত পানি এর আগে ছাড়া হয়নি। যখন ৭০-৮০ শতাংশ পানি ভরে যায়, তখন কেন পানি ছাড়ে না ডিভিসি? কেন্দ্র ড্রেনেজ করে না। নিজেদের রাজ্যগুলোকে বাঁচাচ্ছে। আর সবটা পশ্চিমবঙ্গের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ আর কত বঞ্চনা সহ্য করবে?’</p> <p>মুখ্যমন্ত্রী আরো অভিযোগ করেন, ‘পরিকল্পিতভাবে পশ্চিমবঙ্গকে ডোবানো হয়েছে।’</p> <p>রাজ্যের বন্যা পরিস্থিতি আসলে ‘মানবসৃষ্ট’—এমন কথা অনেকবার শোনা গেছে মমতার গলায়। বছর দুয়েক আগে হাওড়ার উদয়নারায়ণপুরেও মমতা একই কথা বলেছেন। ২০০০ সালে রাজ্যজুড়ে বন্যার পর মমতা বলেছিলেন ‘মানবসৃষ্ট’। ফারাক একটাই, তখন তিনি ছিলেন বিরোধী নেত্রী। আর এখন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী।</p> <p>কিছুদিন আগেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘মানবসৃষ্ট’ বন্যার কথা বলেছিলেন মমতা। আগস্টে প্লাবন পরিস্থিতি নিয়ে ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার পর এক্সে লিখেছিলেন, ‘এখনই আমি ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনের সঙ্গে কথা বললাম। বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে তার সঙ্গে কথা বলেছি। তেনুঘাট থেকে আচমকা বিপুল পরিমাণ পানি ছাড়া নিয়ে আমি আলোচনা করেছি। এর জেরে পশ্চিমবঙ্গ ইতিমধ্যে প্লাবিত হতে শুরু করেছে। আমি তাকে বলেছি, ঝাড়খণ্ডের পানিতে পশ্চিমবঙ্গ প্লাবিত হচ্ছে, আর এটা মানবসৃষ্ট। আমি এই ব্যাপারটি দয়া করে দেখার জন্য বলেছি।’</p> <p>এদিকে দামোদরের পানিতে প্লাবিত হয়েছে হুগলির বেশ কিছু এলাকা। পুরশুড়ার বেশ কিছু জায়গায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে মানুষজন। বেশ কিছু বাড়িতে পানি ঢুকেছে। গ্রামবাসীর সঙ্গে দেখা করে কথাবার্তা বলেন মুখ্যমন্ত্রী। হুগলির তারকেশ্বরের একাধিক গ্রাম পানির নিচে।</p> <p>স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পানির নিচে হাজার হাজার বিঘা চাষের জমি। গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টির জেরে কানায় কানায় পূর্ণ ছিল দামোদর। তার ওপর দফায় দফায় পানি ছেড়েছে ডিভিসি।</p> <p>মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তার কথা হয়েছিল। কিন্তু আবারও ডিভিসির ছাড়া পানিতে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। যার জেরে বন্যাকবলিত তারকেশ্বর ব্লকের কেশবচক, সন্তোষপুর, তালপুর, চাপাডাঙ্গা গ্রাম পঞ্চায়েতের হাজার হাজার মানুষ। ইতিমধ্যে পানিতে তলিয়ে গেছে বহু বসতবাড়ি। দুর্গতদের উদ্ধার করে ত্রাণশিবিরে আনার ব্যবস্থা করা হয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, বারবার প্রশাসন বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন করলেও সহযোগিতা করেনি।</p> <p>ডিভিসির ছাড়া পানিতে বুধবার থেকে হাওড়ার উদয়নারায়ণপুর ও আমতা-২ ব্লক বন্যার কবলে পড়েছে। দুটি ব্লকেরই বেশ কিছু গ্রাম পঞ্চায়েত তলিয়ে গেছে দামোদরের পানিতে। সরকারি সূত্র জানিয়েছে, সেখানেও যেতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী। বুধবারই তিনি চলে যাবেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায়। মেদিনীপুর শহরে রাতে থাকবেন। বৃহস্পতিবার ঘাটালের প্লাবিত এলাকা পরিদর্শনে যেতে পারেন তিনি।</p> <p>সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা</p>