<p>সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাওয়া সন্তানের মৃত্যুকে ‘রাজনৈতিক লাভের’ জন্য ব্যবহার না করতে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইও অঙ্গরাজ্যের এক বাসিন্দা। একজন হাইতিয়ান অভিবাসী চালকের গাড়ির সঙ্গে স্কুল বাসের সংঘর্ষে তার সন্তান মারা গিয়েছিল। ২০২৩ সালের আগস্টে ওহাইওর ছোট শহর স্প্রিংফিল্ডে ওই দুর্ঘটনায় মারা যায় ১১ বছর বয়সী এইডেন ক্লার্ক। গত বছরের সেই ঘটনা সম্প্রতি জাতীয় রাজনীতির আলোচনার কেন্দ্রে আসে ট্রাম্প শিবিরের প্রচারণা পর। শহরটির হাইতিয়ান অভিবাসীদের সম্পর্কে প্রচারণা চালাতে তারা বিষয়টিকে সামনে নিয়ে আসে।</p> <p>সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে এক পোস্টে মঙ্গলবার এইডেনের প্রসঙ্গ টেনে ট্রাম্পের রানিং মেট জেডি ভান্স লেখেন, ‘শিশুটিকে হত্যা করেছিল একজন হাইতিয়ান অভিবাসী।’ পোস্টের পর ওই দিনই সিটি কমিশনের এক সভায় এইডেনের বাবা নাথান ক্লার্ক বলেন, কথাটা পুরনো ক্ষতকে জাগিয়ে তুলেছে। ‘তারা রাজনৈতিক লাভের জন্য আমার ছেলের নাম নিচ্ছে এবং তার মৃত্যুকে ব্যবহার করছে। এটা এখনই বন্ধ হওয়া দরকার।’</p> <p>ক্লার্ক আরো বলেন, ‘আমার ছেলেকে হত্যা করা হয়নি। হাইতি থেকে আসা ওই অভিবাসীর সংঘটিত দুর্ঘটনার কারণে তার মৃত্যু হয়েছে। এই ট্র্যাজেডির ঘটনা স্থানীয়, রাজ্য এমনকি জাতীয় পর্যায়েও মানুষকে ছুঁয়ে গেছে। কিন্তু এর মোড় ঘৃণার দিকে ঘুরিয়ে দেবেন না।’</p> <p>হাইতির অভিবাসীরা স্থানীয় বাসিন্দাদের পোষা প্রাণী ধরে খেয়ে ফেলছে—এমন ভিত্তিহীন দাবিও ছড়িয়েছেন ট্রাম্প ও ভান্স। ক্লার্কের বক্তব্যের কয়েক ঘণ্টার মাথায় ট্রাম্প আবারও এইডেন ক্লার্কের মৃত্যুর কারণ সংক্রান্ত দাবিটি তুলে ধরেন। ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমালা হ্যারিসের সঙ্গে প্রেসিডেনশিয়াল ডিবেটের মঞ্চেই এটি নিয়ে কথা বলেন তিনি।</p> <p>ক্লার্ক বলেন, ‘আমার ছেলে যদি একজন ৬০ বছর বয়সী শ্বেতাঙ্গ মানুষের কারণে মারা যেত তাহলে বোধহয় ভালো হতো।’ এ সময় পাশেই দাঁড়িয়েছিলেন তার স্ত্রী ড্যানিয়েল। ক্লার্ক আরো বলেন, ‘এমন স্থূলবুদ্ধির কথা কেউ বলতে পারে, এটা হয়তো আপনাদের কল্পনারও অতীত। যদি তেমন কারো হাতে আমার ১১ বছরের ছেলেটা মারা পড়ত, অনবরত ঘৃণা ছড়ানো এই লোকগুলোর হাত থেকে হয়তো আমরা রেহাই পেতাম।’</p> <p>যে ভ্যানের সঙ্গে স্কুলবাসের সংঘর্ষে এইডেন মারা যায় সেটি চালাচ্ছিলেন হারমানিয়ো জোসেফ নামের একজন হাইতিয়ান অভিবাসী। জোসেফের ড্রাইভিং লাইসেন্স ছিল না। রাস্তার আরেক পাশে গিয়ে স্কুল বাসকে ধাক্কা দেয় তার ভ্যান। বাস উল্টে গেলে ছেলেটি বাইরে ছিটকে পড়ে যায়। আরো কয়েকটি শিশুও আহত হয়েছিল। অনিচ্ছাকৃত হত্যা ও যানবাহন চালানোর ক্ষেত্রে নিয়মভঙ্গ করার দায়ে দোষী সাব্যস্ত করা হয় জোসেফকে। ৯ থেকে সাড়ে ১৩ বছরের সাজা দেওয়া হয়।</p> <p>ট্রাম্পের প্রচারণায় মঙ্গলবার ব্যবহৃত এক্স অ্যাকাউন্টে এইডেন ও জোসেফের ছবি পাশাপাশি পোস্ট করা হয়। প্রেসিডেনশিয়াল ডিবেটের আগে আগে করা পোস্টটিতে আক্রমণ করা হয় ভাইস প্রেসিডেন্ট কমালা হ্যারিসের অভিবাসন নীতিকেও। ক্যাপশনে লেখা হয়, ‘মনে রাখতে হবে, ১১ বছর বয়সী এইডেন ক্লার্ক স্কুলে যাওয়ার পথে এক হাইতিয়ান অভিবাসীর হাতে নিহত হয়েছিল, যেই অভিবাসীদের কমালা হ্যারিসই এই দেশে প্রবেশের সুযোগ করে দিয়েছে।’</p> <p>হ্যারিস ‘এইডেনের নাম নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন’ বলেও উল্লেখ করা হয়। এর পরের দিন ভান্সের ওই পোস্টটি আসে।</p> <p>নাথান ক্লার্ক বলেন, ‘তারা যত খুশি ঘৃণা উগরে দিতে পারে। অবৈধ অভিবাসন, সীমান্ত সংকট নিয়ে যা খুশি বলতে পারে। এমনকি পোষা প্রাণীর ওপর নৃশংসতা এবং কোনো সম্প্রদায়ের মানুষ সেগুলো খেয়ে ফেলার মতো অসত্য দাবিও তুলতে পারে।’ কিন্তু ‘যত যা-ই হোক, ওহাইওর স্প্রিংফিল্ডের এইডেন ক্লার্কের নাম নেওয়ার অধিকার দেওয়া হয়নি তাদের।’ তার পরিবারের সদস্যরা এখন ‘তাদের জীবনের জঘন্য দিনগুলো পার করছে’।</p> <p>এদিকে বিবিসির পক্ষ থেকে বক্তব্য জানতে চাওয়া হলেও সাড়া দেয়নি ট্রাম্পের প্রচারণা শিবির। ওয়াশিংটন পোস্টকে দেওয়া এক বক্তব্যে তারা আশা প্রকাশ করেছে, ‘গণমাধ্যম ওহাইওর ঘটনাটির মতো মানুষের সেই সত্যিকারের দুর্দশাগুলো তুলে ধরবে, যা এত দিন যথাযথ গুরুত্ব পায়নি।’</p> <p>অন্যদিকে বুধবার এক অগ্নিঝরা প্রেসিডেনশিয়াল ডিবেট দেখল যুক্তরাষ্ট্র। ডোনাল্ড ট্রাম্প ও কমালা হ্যারিসের মধ্যে প্রথম এই বিতর্কে যেসব বিষয় এসেছে সেগুলোর মধ্যে আছে অর্থনীতি, গর্ভপাত, পররাষ্ট্রনীতি, গাজা-ইসরায়েল যুদ্ধ, আফগানিস্তানে তালেবান ইস্যু, প্রজেক্ট-২০২৫, ৬ জানুয়ারির দাঙ্গা। বিতর্কে একে অপরের বিরুদ্ধে মিথ্যাচারের অভিযোগ তোলেন ট্রাম্প-হ্যারিস।</p> <p>ভাইস প্রেসিডেন্ট হ্যারিস অর্থনীতি নিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে বলেন, ‘ডোনাল্ড ট্রাম্প গ্রেট ডিপ্রেশনের পর আমাদের জন্য সবচেয়ে খারাপ বেকারত্ব রেখে গেছেন। আমরা ট্রাম্পের রেখে যাওয়া জঞ্জাল পরিষ্কার করছি।’</p> <p>ট্রাম্প তার সমাপনী বক্তব্যে বলেন, হ্যারিস পলিসির বিষয়ে যে তালিকা দিয়েছেন এগুলো কিছুই না। কারণ ইতিমধ্যে চার বছর ধরে ক্ষমতায় রয়েছেন তিনি এবং সব কাজ শেষ করতে পারেননি। হ্যারিসকে তিনি ‘দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে খারাপ ভাইস প্রেসিডেন্ট’ উল্লেখ করে বলেন, নভেম্বরের নির্বাচনে তিনি জয়ী হলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের শঙ্কা রয়েছে।</p> <p>ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হ্যারিস এক পর্যায়ে বলেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমাবেশ শেষ হওয়ার আগেই দর্শকরা ‘ক্লান্ত হয়ে’ সভাস্থল ত্যাগ করেন। তার মন্তব্যে বিরক্ত হয়ে ট্রাম্পকে গলা চড়িয়ে আত্মপক্ষ সমর্থন করতে দেখা যায়।</p>