<p>‘এমন উইকেটে ১০ থেকে ১৫টি ম্যাচ খেললে ব্যাটারদের ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যাবে।’ ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ শেষে মন্তব্য করেছিলেন সাকিব আল হাসান। সাবেক অধিনায়কের অভিব্যক্তি ছিল মিরপুরের উইকেট নিয়ে। সেই উইকেটে ব্যাটারদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠলেও বোলাররা বেশ উৎসব করেছিলেন। কিন্তু সংযুক্ত আরব আমিরাতে বিশ্বকাপ খেলতে গিয়ে কী হয়েছিল, নিশ্চয়ই নতুন করে মনে করিয়ে দিতে হবে না। এটা শুধু একটি উদাহরণ। কিছু ব্যতিক্রম বাদ দিলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অসমান বাউন্সের স্পিন সহায়ক উইকেটে খেলে অভ্যস্ত বাংলাদেশ। যেখানে বিশেষ কোনো কারিকুরি ছাড়াই দুর্বার হয়ে ওঠেন বোলাররা।</p> <p>কিন্তু এটার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায় দেশের বাইরে কিংবা দেশেও কালেভদ্রে যখন ফ্ল্যাট উইকেটে খেলা হয়। ব্যাটাররা একটু রুদ্রমূর্তি ধারণ করলেই লাইন-লেংথ খুঁজে পেতে কষ্ট হয়ে যায় বোলারদের। চলমান বিপিএলে ঢাকা-সিলেট-ঢাকা হয়ে চট্টগ্রামে আসতেই কঠিন বাস্তবতার মুখে বোলাররা! ব্যাটিং স্বর্গ হিসেবে বেশ পরিচিত এখানকার উইকেট। এবারও বড় স্কোর হচ্ছে।</p> <p>প্রথম ম্যাচে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ২৩৯ রান করেছিল। ম্যাচে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের পেসার আল আমিন ৪ ওভারে ৬৯ রান দিয়েছেন, বিপিএলের ইতিহাসে সবচেয়ে খরুচে বোলিং। একই ম্যাচে ঢাকা-সিলেট পর্বে দুর্ভেদ্য হয়ে ওঠা তানভীর ৪ ওভারে ৫৩ এবং মুস্তাফিজুর রহমান ৩ ওভারে ৪৬ রান দেন। অবশ্য ব্যতিক্রম ছিলেন লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেন। পরের ম্যাচে রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে খুলনার স্পিনার নাহিদুল ইসলাম ৪ ওভারে ৫০ রান দেন।</p> <p>অথচ কিপটে বোলার আর পাওয়ার প্লে ‘বিশেষজ্ঞ’ হয়ে উঠেছিলেন অফ স্পিনার। এমনকি এখন পর্যন্ত টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি শরিফুল ইসলামও চট্টগ্রামে খেই হারিয়েছেন। ফরচুন বরিশালের বিপক্ষে ৪ ওভারে তাঁর খরচ ৪০ রান, শেষ ওভারে দেন ২৩ রান। মরা উইকেটে যে বাংলাদেশের প্রথম সারির বোলাররাও কতটা অসহায়, তার নমুনা ভারত বিশ্বকাপেও দেখা গেছে।</p> <p>সেরা অবস্থা থেকে ২০২৩ বিশ্বকাপ খেলতে গিয়ে প্রায় সব বোলারই নিজেদের হারিয়ে খুঁজেছেন। উইকেট ব্যাটিং সহায়ক হলেই কেন এই অবস্থা? কুমিল্লার প্রধান কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন বলছিলেন, ‘যখন ভালো উইকেট হয় আমাদের বোলাররা একটু নীতিবাচক ভাবনায় চলে যায়। সে যে স্পিনার, এটাই ভুলে যায়। তারা তখন তৃতীয় পেসার হয়ে যায়। জোরে জোরে বল করা শুরু করে দেয়!’</p> <p>এখান থেকে পরিত্রাণের উপায়ও বাতলে দিয়েছেন সালাউদ্দিন, ‘এই ধরনের (ফ্ল্যাট) উইকেটে খেললে সবচেয়ে ভালো ব্যাপার যেটা, আমাদের বোলাররা খুব তাড়াতাড়ি পরিণত হতে পারবে। উইকেটে তাকে তো সংগ্রাম করতেই হবে। তখন সে হয়তো স্পিন করানো শিখবে, বোলিং বৈচিত্র্যের ওপর জোর দেবে। লেংথ পরিবর্তন করে দেখবে।’</p> <p>ফ্ল্যাট উইকেটে খেলে অভ্যস্ত হওয়ার প্রশ্নে একমত কুমিল্লার ব্যাটার তাওহিদ হৃদয়ও, ‘এই রকম উইকেটে খেললে আমাদের ব্যাটারদের জন্য যেমন ভালো, বোলারদের জন্যও। আন্তর্জাতিক ম্যাচ বেশির ভাগ ফ্ল্যাট উইকেটেই হয়। এখান থেকে বোলাররা ডট বল করা শিখবে। সবচেয়ে বড় কথা হলো ভবিষ্যতে ফ্ল্যাট উইকেটে কিভাবে বল করতে হবে, সেটাতে তারা অভ্যস্ত হয়ে যাবে।’</p>