<p>মুঠোফোনের ওপাশে থাকলেও বুঝতে অসুবিধা হলো না গলা ধরে এসেছে তোজাম্মেল হকের। সময় নিয়ে গুছিয়ে কথা বলার চেষ্টা করলেও জড়িয়ে আসছিল তাঁর কণ্ঠস্বর। গত দুই দিন স্বপ্নের মতো কেটেছে তাঁর। অনেকটা আকস্মিকভাবে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ দলে সুযোগ পেয়েছেন ছেলে তানজিদ হাসান তামিম।</p> <p>বগুড়ার তোজাম্মেল হকের মতো একই রকম অনুভূতি সিলেটের গৌছ আলীর। তাঁর ছেলে তানজিম হাসান সাকিব মাত্র দুটি ওয়ানডে খেলেই যে কাল বাংলাদেশ দলের বিশ্বকাপযাত্রার সঙ্গী হয়েছেন। </p> <p>তোজাম্মেল চেয়েছিলেন একমাত্র ছেলে পড়াশোনার পাট চুকিয়ে তাঁর মতো সরকারি চাকরিজীবী হোক। কিন্তু বকাঝকা দিয়েও তানজিদের মাথা থেকে ক্রিকেটের পোকা সরাতে পারেননি তোজাম্মেল।ক্রিকেটের নেশায় স্কুল ফাঁকি দেওয়ায় শিক্ষকের বেত্রাঘাতে রক্তাক্ত হয়েছেন তানজিদ। তবু ক্রিকেটের ঘোর কাটেনি। ছেলের জন্য প্রার্থনায় মা শুধু বলতেন, ‘আল্লাহ, ওকে তুমি ক্রিকেটার বানাইও।’</p> <p><strong>আরো পড়ুন-</strong><a href="https://www.kalerkantho.com/online/sport/2023/09/28/1322093"><strong> ‘দল আগে, নাকি কোনো ব্যক্তি আগে?’</strong></a></p> <p>মঙ্গলবার বাংলাদেশের বিশ্বকাপ দলে ডাক পেয়ে মাকেই সবার আগে ফোন দিয়েছিলেন তানজিদ। কাল তোজ্জামেল সে গল্পই শোনালেন, ‘আমার সঙ্গে কথা হয়নি। ওর মায়ের সঙ্গে কথা হয়েছে। ওর মাকেই প্রথম ফোনটা দিয়েছিল। আমার বিশ্বাস ছিল, ছেলে বিশ্বকাপ দলে সুযোগ পাবে।’<br /> তানজিমের তিন বোন আছে।</p> <p>তবে তানজিদের মতো তিনিও বাবা-মায়ের একমাত্র ছেলে। যদিও এ ক্ষেত্রে গল্পটা ভিন্ন। তানজিমের মা সেলিনা পারভিন চাননি ছেলের ক্রিকেটের নেশায় পড়াশোনা নষ্ট হোক। বাবা গৌছ আলী তখন প্রবাসী। মাকে অনেক বুঝিয়ে চট্টগ্রামে এক মাসের একটি ক্রিকেট ক্যাম্প করতে যান তানজিম। এরপর বাবার অনুপ্রেরণায় ক্লাস নাইনে বিকেএসপিতে ভর্তির সুযোগ পান তানজিম।</p> <p>চোটের কারণে ইবাদত হোসেন ছিটকে পড়ায় এশিয়া কাপে ডাক পান তানজিম। অভিষেকে ভারতের বিপক্ষে দারুণ বোলিংয়ে দুই উইকেট নিয়ে আলোচনায় উঠে আসে। মাত্র দুই ম্যাচে বিশ্বকাপ ভাগ্য খুলে গেছে তানজিমের। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপজয়ী সতীর্থ তানজিদের মতো তানজিমও স্বপ্ন পূরণের প্রথম খবরটি তাঁর মাকে জানান। গৌছ আলী বলেন, ‘আমি জেনেছি ফেসবুক থেকে। তখন আমি বাইরে ছিলাম। আমার সঙ্গে ওর কথা হয়নি। পরে ওর মা ফোন করে আমাকে জানিয়েছে।’</p> <p><strong>আরো পড়ুন- </strong><a href="https://www.kalerkantho.com/online/sport/2023/09/27/1321889"><strong>ফিজিওর রিপোর্ট নিয়ে তামিমের চ্যালেঞ্জ</strong></a></p> <p>তামিম ইকবাল দলে থাকলে হয়তো বিশ্বকাপের বিমানে ওঠা হতো না তানজিদের। ডাকনাম তামিম বলেই শুরু নয়, তানজিদ ছোটবেলা থেকেই বড় তামিমের ভক্ত। বড় তামিমও অনেকবার জানিয়েছেন, বড় মাপের ক্রিকেটার হওয়ার সব গুণ আছে তানজিদের। অথচ নিজের বাংলা ট্রাক ক্রিকেট একাডেমি থেকে যখন তানজিদকে বয়সভিত্তিক দলে সুযোগ দিয়েছিলেন খালেদ মাহমুদ, তখন সাবেক এই অধিনায়ককে অনেক সমালোচনা সহ্য করতে হয়েছিল। জাতীয় দলেও যাত্রাটা সুখকর হয়নি তানজিদের। চতুর্থ ওপেনার হিসেবে অভিষেকে শূন্য রানে আউট হন তিনি।</p> <p>সেই তানজিদ এখন স্বপ্নসারথি হয়ে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ দলে। ছেলেকে নিয়ে গর্বের যেন শেষ নেই তোজাম্মেলের, ‘আমি খুবই গর্বিত, ছেলে বাংলাদেশের হয়ে বিশ্বকাপ খেলতে গেছে! এটার যে আনন্দ, সেটা আসলে কোনো কিছু দিয়ে প্রকাশ করা যাবে না। আমি চাইব আমার ছেলে যেন বিশ্বকাপে ভালো পারফরম করে, বাংলাদেশের নাম আরো উজ্জ্বল করে।’</p> <p>একই রকম গর্ব হচ্ছে তানজিমের বাবা গৌছ আলীরও। ২০২০ সালে ছেলে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জিতে ফেরায় বাড়িতে যেমন আনন্দ উদযাপন হয়েছিল, এবারও প্রতিবেশীরা যেন তানজিমকে সেভাবে বরণ নিতে পারে। সে আশায় বুক বেঁধেছেন গৌছ আলী, ‘দোয়া করি আমার ছেলে যেন এবারও শিরোপা জিতে আসতে পারে। সে যদি বিশ্বকাপ জিতে আসতে পারে তাহলে বাবা হিসেবে এর চেয়ে গর্বের তো আর কিছু নেই, গর্বে আমার বুক আরো চওড়া হবে।’</p>