<p>অণু-পরমাণুর গতির সঙ্গে তাপমাত্রার একটা সম্পর্ক আছে। তাপমাত্রা বাড়লে অণু-পরমাণুর কম্পন বেড়ে যায়। আর তাপমাত্রা কমিয়ে দিলে অণু-পরমাণুর কম্পন কমতে থাকে। প্রশ্ন হলো—তাপমাত্রা শূন্যে নামিয়ে আনলে কী ঘটবে? ক্লাসিক্যাল বিজ্ঞান বলে, শূন্য তাপমাত্রায় সব বস্তুকণা শান্ত হয়ে যায়।</p> <p>এদের গতিও হয় শূন্য। যা হাইজেনবার্গের অনিশ্চয়তা নীতির বিরোধী। অনিশ্চয়তা নীতি অনুযায়ী, কোনো অতিপারমাণবিক কণার বেগ এবং অবস্থান একসঙ্গে মাপা যায় না। সে ক্ষেত্রে শূন্য তাপমাত্রায় সেই কণা যদি স্থির হয়, তবে এর অবস্থান সহজেই শনাক্ত করা যাবে। সঙ্গে বেগও জানা যেত। বলাবাহুল্য, স্থির কণার বেগ শূন্য।</p> <p>তাহলে ক্লাসিক্যাল ব্যাখ্যাটি পুরোপুরি সত্য নয়। এককথায়, তাপমাত্রা শূন্যে নামিয়ে আনলেও কণা শান্ত থাকে না। সামান্য কম্পন থাকে। আর সেই কম্পনের উৎস নিম্ন শক্তি। যা দিয়ে শূন্য তাপমাত্রায়ও সে কম্পন চালু রাখে। এই শক্তিটুকুই শূন্য বিন্দু শক্তি বা ‘জিরো পয়েন্ট এনার্জি’ নামে পরিচিত।</p> <p>জিরো পয়েন্ট এনার্জির প্রভাব দেখা যায় শূন্য স্থানেও। ইংরেজিতে যাকে বলে ‘ভ্যাকিউম’। খাঁটি শূন্য স্থান বলতে বোঝায় সেখানে কিছু নেই। এমনকি শক্তিও নেই। কিন্তু কোয়ান্টাম তত্ত্বে এই ধারণা ভুল। কোয়ান্টাম ক্ষেত্র তত্ত্বে আমরা জেনেছি, মহাবিশ্বের সর্বত্র ছড়িয়ে আছে শক্তির ক্ষেত্র।</p> <p>ধরা যাক, সেই ক্ষেত্রের কোনো একটা অংশে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কতটুকু শক্তি ছিল হিসাব করা হচ্ছে। অনিশ্চয়তা নীতি অনুসারে, সময় যেখানে নির্দিষ্ট, সেখানে শক্তির মান হবে অনিশ্চিত। ফলে তা শূন্যও হতে পারে না। বোঝা গেল, শূন্যস্থান বলতে কিছুই নেই। মহাবিশ্বের সর্বত্রই শক্তির উপস্থিতি থাকে।</p> <p>কারণ হাইজেনবার্গের অনিশ্চয়তা নীতি অনুসারে কোনো কোয়ান্টাম ক্ষেত্রে শক্তি কখনো শূন্য হয় না। প্রশ্ন করা যেতে পারে—শূন্যস্থানে কিভাবে শূন্য থেকে শক্তির উদ্ভব হচ্ছে?</p> <p>এই ভূতুড়ে শক্তির উৎস কী? এর জবাব ‘ভার্চুয়াল কণা’। শূন্য স্থানে প্রতিনিয়ত এক জোড়া কণা-প্রতিকণার সৃষ্টি হচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে তা আবার পরস্পরকে ধ্বংস করে বিকিরণে পরিণত হয়। এই প্রক্রিয়া চলমান থাকে। তাই শূন্য স্থানেও শক্তির অস্তিত্ব কখনো শেষ হয় না।</p> <p>১৯৪৮ সালে ডাচ পদার্থবিদ হেনড্রিক কাসিমির ল্যাবরেটরিতে শূন্য স্থানে শক্তির অস্তিত্ব প্রমাণ করেন। খুব সহজ একটি পরীক্ষা যা ঘরে বসেই করা সম্ভব। তার এই বিখ্যাত পরিক্ষাটি ‘কাসিমির ইফেক্ট’ নামে পরিচিত।<br /> <br /> শূন্য স্থান বা ভ্যাকিউম বলে কিছু হয় না। যে ক্ষেত্রকে আমরা শূন্যস্থান বলে মনে করি, সেখানেও ভার্চুয়াল কণার উপস্থিতি বিদ্যমান। শূন্য বিন্দু শক্তির দরুন কোনো কণারই শক্তি শূন্য হয় না। যেহেতু শূন্য স্থানেও সব সময় কণার উপস্থিতি থাকে, সেহেতু বলা যায়—শূন্য স্থানেরও শক্তি শূন্য হয় না।</p> <p>ভাবতে দোষ নেই—কণার শূন্য বিন্দু শক্তি থেকে সংগৃহীত শক্তি কি দৈনন্দিন কাজে ব্যবহার যাবে? উত্তর—না। কেননা এই শক্তি একটা কণার ন্যূনতম শক্তির মাত্রা। যা পরিবর্তনযোগ্য নয়। ফলে এই শক্তির মান শূন্য হয় না কখনো। তবে এখানে মার্কিন পদার্থবিজ্ঞানী রবার্ট ফরওয়ার্ডের একটা থট এক্সপেরিমেন্টের কথা না বললেই নয়।</p> <p>১৯৮৪ সালে তিনি একটা শূন্য বিন্দু শক্তির ব্যাটারির কথা চিন্তা করেন। নাম দিয়েছিলেন ‘ভ্যাকিউম ফ্লাকচুয়েশন ব্যাটারি’। তিনি গাণিতিক যুক্তি দিয়ে দেখান এই ধরনের ব্যাটারি তৈরি করতে যে শক্তি ব্যয় হবে, তা শূন্য বিন্দু শক্তির থেকেও বেশি।</p> <p><strong>সম্পর্কিত তত্ত্ব</strong><br /> হাইজেনবার্গের অনিশ্চয়তা নীতি<br /> কোয়ান্টাম ক্ষেত্র তত্ত্ব</p> <p><strong>জীবনী</strong><br /> <strong>হেনড্রিক কাসিমির</strong><br /> ১৯০৯-২০০০<br /> ডাচ পদার্থবিদ, নিলস বোর ও পাউলির সহকর্মী।</p> <p><strong>রবার্ট ফরওয়ার্ড</strong><br /> ১৯৩২-২০০২<br /> মার্কিন পদার্থবিদ, অ্যারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ার, বিজ্ঞান কল্পকাহিনি লেখক।</p> <p>বর্ণনা<br /> অ্যান্ড্রু মে</p>