<p>রাজধানী ঢাকায় যানজট যেন একটি চিরস্থায়ী সমস্যা। এমনিতেই এই শহরের যাতায়াতে প্রতিদিন সাধারণ মানুষকে অসীম ধৈর্যের পরীক্ষা দিতে হয়। এর মাঝে যখন কোনো গোষ্ঠী বা সংগঠন তাদের দাবি আদায়ের উদ্দেশ্যে রাস্তায় অবরোধ করে, তখন পুরো শহরের জীবনযাত্রা যেন থমকে যায়। প্রশ্ন হলো, এই পদ্ধতিতে আদৌ কী দাবি আদায় হয়, নাকি সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বাড়ে?</p> <p><strong>এক.</strong> ঢাকার রাস্তায় প্রতিনিয়তই দেখা যায় বিভিন্ন ধরনের আন্দোলন। জাতীয় প্রেসক্লাব, সায়েন্স ল্যাব, কারওয়ান বাজার, বাংলামোটর—এমন গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে হয় মানববন্ধন, অবস্থান কিংবা সড়ক অবরোধ। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- চাকরি জাতীয়করণ, বেতন বৈষম্য দূরীকরণ, দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, পরীক্ষার ফলাফল বাতিল কিংবা নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দাবি। এইসব কর্মসূচি জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য আয়োজিত হলেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে সাধারণ মানুষের ওপর। যারা অফিসে, হাসপাতালে বা জরুরি প্রয়োজনে বের হন, তাদের সময় এবং মানসিক স্থিতি—দুটোই ক্ষতিগ্রস্ত হয়।</p> <p><strong>দুই. </strong>ঢাকার রাস্তা অবরোধের ফলে সারা শহরে এক প্রকার স্থবিরতা নেমে আসে। জরুরি সেবা, যেমন অ্যাম্বুলেন্স কিংবা ফায়ার সার্ভিসের কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হয়। অনেক সময় রোগীরা সময়মতো হাসপাতালে পৌঁছাতে না পারার কারণে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটে। একদিকে আন্দোলনকারীরা তাদের দাবির প্রতি কর্তৃপক্ষের নজর আকর্ষণ করতে চান, অন্যদিকে তাদের এই পদ্ধতি জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার জন্ম দেয়।</p> <p><strong>তিন.</strong> সড়ক অবরোধকে দাবি আদায়ের উপযুক্ত পদ্ধতি বলা যায় না। একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সংলাপ, স্মারকলিপি প্রদান এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা—এসব পদ্ধতিতে সমস্যার সমাধান সম্ভব। এই পদ্ধতিগুলো জনজীবনকে অচল না করেও দাবি আদায়ের জন্য কার্যকর হতে পারে। যখনই আন্দোলনকারীরা রাস্তায় নামেন, তখন তারা জনসমর্থন পেতে চান। কিন্তু রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ করার কারণে মানুষের অসন্তোষ সৃষ্টি হলে সেই সমর্থন নষ্ট হয়ে যায়। বরং প্রাসঙ্গিক এবং যৌক্তিক দাবি নিয়ে আলোচনা করলে তা সহজে সমাধান পায় এবং জনগণের মনোভাবও ইতিবাচক থাকে।</p> <p><strong>চার.</strong> অবরোধের মাধ্যমে দাবি আদায়ের প্রবণতা আমাদের ভাবতে বাধ্য করে, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রতি আমাদের আস্থা কতটা শক্তিশালী? আন্দোলনকারীদের উচিত তাদের দাবি একটি গঠনমূলক উপায়ে উপস্থাপন করা। স্মারকলিপি প্রদান, গণস্বাক্ষর সংগ্রহ কিংবা শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ—এগুলোই দাবি আদায়ের আরও সুশৃঙ্খল ও কার্যকর পদ্ধতি হতে পারে।</p> <p><strong>শেষ কথা</strong></p> <p>সড়ক অবরোধের মাধ্যমে দাবি আদায়ের প্রবণতা শুধু জনজীবনকে দুর্বিষহ করে তোলে না বরং আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্যকেও প্রশ্নবিদ্ধ করে। আমরা আশা করি, ভবিষ্যতে কোনো গোষ্ঠী বা সংগঠন তাদের দাবি আদায়ের জন্য রাস্তা বন্ধ করার মতো কর্মসূচি থেকে বিরত থাকবে। সমাধান আসুক গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে—আলোচনা, সমঝোতা এবং জনগণের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে। এই পথেই আমরা গড়তে পারি একটি সুশৃঙ্খল ও সমৃদ্ধ সমাজ।</p> <p><em>[মতামত লেখকের নিজস্ব। কালের কণ্ঠ অনলাইন বা কালের কণ্ঠ-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।]</em></p>