<p style="text-align:justify">জোর করে কাউকে ধরে নিয়ে যাওয়া খুবই দুঃখজনক। এই গুম প্রতিরোধ করতে আন্তর্জাতিক কনভেনশন ২০১০ সালে কার্যকর হয়। কিন্তু দুঃখজনক হচ্ছে, এত দিন এই কনভেনশনে আমাদের দেশ স্বাক্ষর করেনি। তবে আজকে আমাদের প্রধান উপদেষ্টা এই কনভেনশনে স্বাক্ষর করেছেন। এখন থেকে এটি কার্যকর ভূমিকা পালন করবে।</p> <p style="text-align:justify">কাউকে জোরপূর্বক তুলে নেওয়া হলো মানবাধিকার লঙ্ঘন করা। কাউকে তুলে নিয়ে যাওয়ার মানে হলো তার ব্যক্তিস্বাধীনতা হরণ করা। আর ব্যক্তিস্বাধীনতা হরণ করার মধ্যে তার ভাগ্য নির্ধারণ করা হয়।</p> <p style="text-align:justify">কী ধরনের ভাগ্য নির্ধারণ করা হচ্ছে, তা সব ক্ষেত্রে আমরা জানি না। তাই আমরা জাতীয় মানবাধিকার কমিশন থেকে এগুলো শক্তভাবে প্রতিরোধের কথা বলেছি। আমরা বলেছি যে এগুলো কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আন্তর্জাতিক কনভেনশন রাষ্ট্রের ওপর কতগুলো শর্ত আরোপ করে।</p> <p style="text-align:justify">অর্থাৎ রাষ্ট্র কাউকে জোরপূর্বক গুম করতে পারবে না। এটাকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে দেখা হবে। এই গুম সংস্কৃতি থেকে প্রতিটি রাষ্ট্রকে বিরত থাকতে হবে। এ ছাড়া কোনো ব্যক্তি যদি নিখোঁজ থাকে, তখন তার ব্যাপারে তদন্ত করতে হবে। তার পরিবারকে ন্যায্য বিচার এবং ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। এ কনভেনশন এই শর্তগুলো পালন করতে রাষ্ট্রকে বাধ্য করতে পারে।</p> <p style="text-align:justify">সম্প্রতি ‘আয়নাঘর’ নিয়ে যে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে, সেই তথ্যের ভিত্তিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে আমরা এরই মধ্যে জানিয়েছি যে এই গুম কারা করেছে, কতজন এখনো আয়নাঘরে আছে, কেন গুমগুলো হয়েছে—সব কিছু যেন স্পষ্টভাবে জানানো হয়। এর পাশাপাশি যারা এখনো রয়েছে, তাদের যেন দ্রুত ছেড়ে দেওয়া হয়। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের ২০০৯ সালের আইনে ১৮ নম্বর ধারায় স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে কোনো আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর ওপর আমাদের কোনো তদন্ত করার এখতিয়ার নেই। এ জন্য এই বিষয়ে আমরা সরাসরি তদন্ত করতে পারিনি। কিন্তু এ বিষয় যেন তদন্ত করা হয় সে জন্য আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে একাধিকবার নির্দেশনা দিয়েছি এবং এই আইন সংশোধন করার জন্য প্রস্তাবনা দিয়েছি।</p> <p style="text-align:justify">সার্বিকভাবে আমি বলতে চাই, কাউকে গুম করা পুরোপুরি নিষিদ্ধ একটি বিষয়। ভিকটিমদের স্বাধীনতা রক্ষা করা, তাদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের সংবিধানের সঙ্গে গুম বিষয়টি পরিপন্থী। এই গুম সংস্কৃতির কারণে একজন ব্যক্তির প্রতি ন্যায্য বিচার বাস্তবায়ন করার আশ্বাস যে সংবিধান দিচ্ছে, সেটি আমরা করতে পারছি না। এটি একটি উদ্বেগজনক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ বিষয়ে রাষ্ট্রের যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি। ]</p> <p style="text-align:justify">আমাদের দেশ আন্তর্জাতিক কনভেশনে স্বাক্ষর করায় আমরা মানবাধিকার কমিশনের পক্ষ থেকে প্রধান উপদেষ্টাকে অভিনন্দন জানাই। যতগুলো গুম হয়েছে, সেগুলো প্রকাশ করা হোক। এই বিষয়গুলো তদন্ত করে যারা এর জন্য দায়ী তাদের শাস্তি প্রদান করা হোক এবং গুম হওয়া ব্যক্তির পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হোক।</p> <p style="text-align:justify">লেখক : <strong>মানবাধিকার কমিশন চেয়ারম্যান</strong></p>