<p>মা-বাবার কাছে সন্তান এতটাই মূল্যবান, যার তুলনা অন্য কিছুর সঙ্গে হয় না। নিজের সন্তান যেন সুরক্ষিত থাকে, সুস্থ থাকে, ঠিকঠাকভাবে বেড়ে ওঠে, এটাই সবার চাওয়া। সন্তানের সামান্য জ্বরেও মা-বাবা কী করবেন, তা বুঝতে পারেন না। হাজার প্রচেষ্টা সন্তানের কষ্ট যদি একটু কমাতে পারেন। এই তো মা-বাবার অকৃত্রিম ভালোবাসা সন্তানের প্রতি।</p> <p>এই কথাগুলো সবারই জানা। কিন্তু আজ সেই বিষয়টি নিয়ে কথা বলব যা আমরা অনেকেই অগ্রাহ্য করেই যাই। আর তা হলো দাম্পত্য কলহ ও সন্তানের মানসিক স্বাস্থ্য। মা-বাবার পারস্পরিক আস্থা ও ভালোবাসার সম্পর্ক থেকেই শিশু প্রথম বুঝতে শেখে যে পরিবার আসলে কী। মা-বাবার ভালোবাসা যেমন সন্তানকে সুস্থ, সুন্দরভাবে বেড়ে উঠতে সাহায্য করে; ঠিক তেমনি দাম্পত্য কলহ বা মনোমালিন্য সন্তানকে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দেয়।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="সন্তানের পড়াশোনায় মনোযোগ বাড়াতে যা করবেন" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/09/05/1725551442-cecf706e4e4990352328e9d0978d6eeb.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>সন্তানের পড়াশোনায় মনোযোগ বাড়াতে যা করবেন</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/lifestyle/2024/09/05/1422475" target="_blank"> </a></div> </div> <p><strong>মা-বাবার ঝগড়া-বিবাদ কিভাবে সন্তানের ওপর প্রভাব ফেলে?</strong></p> <p>পরিবারে যদি ডমেস্টিক ভায়োলেন্সের মতো ঘটনা ঘটে থাকে, তাহলে সেই পরিবেশে সন্তানের সুস্থভাবে বড় হওয়া কতটুকু সম্ভব? এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে প্রায় ৭২% বিবাহিত নারীরা শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হন। ২০১৩ সালে সাইকোলজিক্যাল সায়েন্স জার্নাল তাদের একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে যেখানে বলা হয়, ৬ মাস বয়সী বাচ্চার সামনেও যখন মা-বাবার ঝগড়া-বিবাদ হয়। তখন সেটা মস্তিষ্কে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। দীর্ঘদিন এই ধরনের পরিবেশে থাকার ফলে মানসিক বিকাশও দেরিতে হয়।</p> <p>এ ছাড়া আরো একটি প্রতিবেদনে এসেছে, কিন্ডারগার্টেন থেকে শুরু করে টিনএজ পর্যন্ত যেসব ছেলেমেয়ে পরিবারের দ্বন্দ্ব-সংঘাতের মাঝে বড় হয়, প্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায় অনেক ক্ষেত্রে তাদের মানসিক সমস্যা দেখা দেয়।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="সন্তানের আবদার বেড়েই চলছে? সামলাবেন যেভাবে" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/08/30/1725018648-617464613b0547941ba58aaf823ad386.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>সন্তানের আবদার বেড়েই চলছে? সামলাবেন যেভাবে</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/lifestyle/2024/08/30/1420353" target="_blank"> </a></div> </div> <p><strong>দাম্পত্য কলহ ও সন্তানের ওপর এর প্রভাব</strong></p> <p>চলুন, দেখে নিই এ ক্ষেত্রে সন্তানের ওপর কী ধরনের প্রভাব পড়ে।</p> <p><strong>আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি</strong></p> <p>ছোটবেলা থেকে মা-বাবার কলহ দেখে বড় হলে সে কিন্তু আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠতে পারে না। যেহেতু সুস্থ পারিবারিক পরিবেশটা পাচ্ছে না এবং এই অবস্থায় তার কী করা উচিত, সেটাও বুঝে উঠতে পারে না। আস্তে আস্তে সে তার আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলে। নিজের ব্যক্তিত্ব বিকাশের সুযোগও সে পায় না।</p> <p><strong>কাজে অমনোযোগী</strong></p> <p>আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলার কারণে কোনো কাজেই সে মনোযোগ ধরে রাখতে পারে না। এটাও এক ধরনের মানসিক সমস্যা।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="সন্তানের চোখের জ্যোতি বাড়াতে খাওয়াতে পারেন যেসব ফল" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/08/24/1724505234-25373c9a05006c5b3f6a6b0874d2bfb1.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>সন্তানের চোখের জ্যোতি বাড়াতে খাওয়াতে পারেন যেসব ফল</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/lifestyle/2024/08/24/1418283" target="_blank"> </a></div> </div> <p><strong>জেদ ও রাগ বেড়ে যাওয়া</strong></p> <p>একেকজন শিশুর মাঝে দেখা যায় একেক ধরনের পরিবর্তন। কেউ প্রচণ্ড রকমের ভীতু, কেউ জেদি, কেউ বা রাগ কন্ট্রোল করতে পারে না, এই ধরনের ইস্যু দেখা যায়। সব সময় উদাসীন থাকা, কারো সঙ্গে মিশতে না চাওয়া বা খেলতে গিয়ে অন্যদের সঙ্গে খারাপভাবে কথা বলা– এসবই পারিবারিক অশান্তির ফলাফল। দাম্পত্য কলহ সন্তানের মানসিক বিকাশের প্রতিটা ধাপেই বাধা সৃষ্টি করে।</p> <p><strong>একাডেমিক কার্যক্রমে অবনতি</strong></p> <p>যে বাচ্চাটা সব সময়ই মন খারাপ করে থাকে, ঘরে ঝগড়া দেখে বড় হয়; তার জন্য লেখাপড়ায় মনোযোগ ধরে রাখা বেশ কঠিন। আর সে একটা সময় এসে হাল ছেড়ে দেয়। এ জন্যই দেখা যায়, অনেক ছেলে মেয়ে টিনএজে এসে অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়ে, ইয়ার ড্রপ দেয়, পড়াশোনাতে আর ফোকাসড থাকতে পারে না।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="পরিবারের সবার মধ্যে ইসলামের সাম্যনীতি" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/07/31/1722413761-0de4d5b587042d1969b5bc905a3f9394.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>পরিবারের সবার মধ্যে ইসলামের সাম্যনীতি</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/Islamic-lifestylie/2024/07/31/1410462" target="_blank"> </a></div> </div> <p><strong>শারীরিক অসুস্থতা</strong></p> <p>একটানা মানসিক চাপে থাকতে থাকতে কিন্তু শরীরে বিভিন্ন ধরনের রোগব্যাধি দেখা দেয়। ইনসমনিয়া, জ্বর, দুর্বলতা, ক্ষুধামন্দা, মাথা ব্যথা এমনকি অস্বাভাবিকভাবে কথা বলা, কথা জড়িয়ে যাওয়াসহ নানা রকমের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। আর মানসিক অবসাদ তো তার নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে যায়।</p> <p><strong>প্রাপ্তবয়সে এসেও মেন্টাল ট্রমা</strong></p> <p>যদি শৈশব কাটে আতঙ্কে, নিরাপত্তাহীনতায়; তাহলে ভবিষ্যতে কী হবে ভাবুন তো? দাম্পত্য কলহ দেখে যারা বড় হয়, তারা জীবনে সঠিক লাইফ পার্টনার পছন্দ করতে দ্বিধাদ্বন্দ্বে থাকে। এই মানসিক ট্রমার কারণে তারা বিবাহিত জীবনেও ইনসিকিউরিটিতে ভোগে। অনেকে অবশ্য ট্রাই করেন বা স্ট্রাগল করে এই ট্রমা কাটিয়ে ওঠার।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="সন্তান কথায় কথায় মিথ্যা বলছে? যেভাবে সামলাবেন" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/08/18/1723978303-c62affba08439616f8d3f7e488188830.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>সন্তান কথায় কথায় মিথ্যা বলছে? যেভাবে সামলাবেন</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/lifestyle/2024/08/18/1416205" target="_blank"> </a></div> </div> <p><strong>মা-বাবার করণীয় কী?</strong></p> <p>১) একবার নিজেকে প্রশ্ন করুন তো, আপনার রাগ, ইগো সব কিছু কি আপনার সন্তানের চেয়ে বড়? যেকোনো কথা-কাটাকাটিতে জড়ানোর আগে একবার ভেবে নিন, এতে কি আপনার কোনো উপকার আছে ক্ষতি ছাড়া? বা আপনি তর্কে জিতে খুব খুশি হচ্ছেন, এদিকে আপনার সন্তান ভয় পাচ্ছে, অসহায় বোধ করছে; তাহলে আপনার এই সাময়িক জিতে যাওয়াতে কার লাভ হলো?</p> <p>২) সব সময় চেষ্টা করবেন উত্তেজিত না হয়ে আস্তে কথা বলে সমস্যার সমাধান করতে। বাচ্চার সামনে কোনোভাবেই তর্কে জড়াবেন না। বরং ওই জায়গা থেকে সরে যাওয়া, চিন্তা-ভাবনা করে পরে কথা বলাই ভালো সিদ্ধান্ত। মনে রাখবেন, বাচ্চাকে যা শেখাবেন, সে তাই শিখবে। আপনি ভালো কথা, ভালো কাজ করলে বাচ্চাও তাই শিখবে। আপনি খারাপভাবে কথাবার্তা বলতে থাকলে সে সেটাই মনে রাখবে।</p> <p>৩) সন্তানের পড়াশোনা থেকে শুরু করে সব কিছুর দায়িত্ব একজনের ওপর না দিয়ে দায়িত্ব বণ্টন করুন। সন্তানের সঙ্গে সময় কাটানো খুব জরুরি। তার মনের কথা, সে কী ভাবছে, কী জানাতে চাচ্ছে, সব কিছু খেলা বা গল্পের ছলে জেনে নিন। বাইরে ঘুরতে যাওয়া বা একসঙ্গে সময় কাটানো শিশুর মানসিক স্বাস্থ্য বিকাশে সাহায্য করে।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="বাড়ির বয়স্কদের যত্ন নেবেন যেভাবে" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/08/30/1725030771-b8444b78cd76d8e3cc5d97d80ae6dcf7.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>বাড়ির বয়স্কদের যত্ন নেবেন যেভাবে</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/lifestyle/2024/08/30/1420403" target="_blank"> </a></div> </div> <p>৪) পারিবারিক কলহকে কেন্দ্র করে বাচ্চাকে কখনোই যেকোনো একজনের পক্ষ নিতে বাধ্য করবেন না। বা তার কাছে একজন আরেকজনের খারাপ দিক তুলে ধরবেন না। সন্তানকে পজিটিভ থাকতে সাহায্য করুন। মা-বাবা সম্পর্ককে ইতিবাচক ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করুন।</p> <p><strong>এর সমাধান কী?</strong></p> <p>বাচ্চা নিলেই সংসারের সব সমস্যা মিটে যাবে, এটি ভুল ধারণা। দাম্পত্য কলহ না মিটিয়ে এবং নিজেদের পরিবর্তন না করে সংসারে সন্তানের আগমনে কি সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে? বরং আপনার ব্যক্তিগত সমস্যাগুলো কাটিয়ে উঠতে না পারার কারণে আপনার সন্তান ট্রমার শিকার হবে প্রতিনিয়ত।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="বাড়িতে রক্তের শর্করার মাত্রা মাপার সময় কী কী মেনে চলবেন" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/08/01/1722513714-e3999ab76ea3c435ae82a0a6ffbecc01.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>বাড়িতে রক্তের শর্করার মাত্রা মাপার সময় কী কী মেনে চলবেন</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/lifestyle/2024/08/01/1410825" target="_blank"> </a></div> </div> <p>তাহলে কী করা উচিত? আলাদা হয়ে যাবেন? সন্তান সব সময়ই তার মা-বাবা দুজনকেই পাশে পেতে চায়। তাই সন্তানের ভবিষ্যতের জন্য নিজেরা কিছু ক্ষেত্রে কম্প্রোমাইজ করুন, মিউচুয়ালি ডিসিশন নিন, কমিউনিকেশন গ্যাপ থাকলে সেটা মিটিয়ে ফেলুন। প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞের হেল্প নিন, একজন কনসালট্যান্ট-এর শরণাপন্ন হোন। কাপল কাউন্সেলিং একটি ভালো অপশন হতে পারে।</p> <p>আর একান্তই যদি কম্প্রোমাইজ করা অসম্ভব হয়ে যায়, বাচ্চা ডোমেস্টিক ভায়োলেন্সের শিকার হয় তাহলে সে ক্ষেত্রে বুঝে-শুনে আলাদা হওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, অবশ্যই দুপক্ষের সম্মতিক্রমে। এতে করে অন্তত সন্তান প্রতিদিনের ঘটে যাওয়া অপ্রীতিকর ঘটনা থেকে রেহাই পাবে। সন্তান যেন স্বাভাবিক, সুস্থ পরিবেশে বড় হতে পারে, সেই বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।</p> <p>সূত্র : সাজগোজ</p>