<p>ডায়াবেটিস নিয়ে মোটামুটি সবাই চিন্তিত। যাদের আছে তারাও এবং যাদের নাই তারাও চিন্তিত। তারা ভাবেন সব সময় রক্তে শর্করার মাত্রা বেশি থাকা হয়তো খারাপ। আবার বাদামি চালের ভাত খাওয়ার অভ্যাসেও রক্তে শর্করা বেশি হতে পারে। এগুলো ঠিক, তবে ডায়াবেটিস হওয়ার ক্ষেত্রে শুধু এই বিষয়গুলোই নির্ভর করে না।</p> <p>সার্বিকভাবে ভালো থাকার জন্য রক্তে প্রয়োজনীয় মাত্রায় শর্করা থাকা প্রয়োজন। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কারণে ডায়াবেটিস ও রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ে নানা ভুল ধারণা প্রচলিত রয়েছে।</p> <p><strong>ধারণা ১ :</strong> দেহের ওজন বেশি মানেই ডায়াবেটিস হবে</p> <p><strong>বাস্তবতা : </strong>শুধু ওজন ও বিএমআইয়ের ওপর ডায়াবেটিস হওয়া নির্ভর করে না। এই বিষয়ে নিউ ইয়র্কের ‘এস্থার ট্যাম্বি নিউট্রিশন’-এর প্রতিষ্ঠাতা ও পুষ্টিবিদ এস্থার টাম্বি বলেন, দেহের ওজনের সঙ্গে ডায়াবেটিস হওয়ার চিন্তাধারার কারণে রোগ নির্ণয়ে ভুল হতে পারে।</p> <p>ওয়েলঅ্যান্ডগুড ডটকমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে তিনি আরো বলেন, সব টাইপ ২ ডায়াবেটিসে আক্রান্তরা স্থূল হয় না, সব হালকা-পাতলা গড়নের মানুষের টাইপ ১ ডায়াবেটিস থাকে না।</p> <p>আসল বিষয় হলো ওজন ছাড়াও বয়স, পারিবারিক ইতিহাস, শারীরিক কর্মকাণ্ডের অভাব, হজমতন্ত্রের ডায়াবেটিস, প্রি-ডায়াবেটিস থেকে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে। আকারের তুলনা দেহের অবস্থার ওপর সুস্বাস্থ্য নির্ভর করে। ব্যায়াম ও পর্যাপ্ত ঘুম সুস্থ থাকার মাত্রা বাড়ায়।</p> <p><strong>ধারণা ২ :</strong> ডায়াবেটিস হলে কার্ব খাওয়া যায় না</p> <p><strong>বাস্তবতা :</strong> ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের পুষ্টি উপাদান গ্রহণে তারতম্য ঘটে। এর মধ্যে কার্বোহাইড্রেইটসও রয়েছে।</p> <p>ডায়াবেটিসে আক্রান্তরা সাধারণ কার্বোহাইড্রেইটস সমৃদ্ধ খাবার, যেমন- ওটস, ফল ও কিছু সবজি খাওয়া থেকে দূরে সরে যান। কারণ এগুলো দ্রুত রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ায়। তবে নিয়মিত এই পদ্ধতি অনুসরণ করলে উল্টো ফল হতে পারে বলে জানান পুষ্টিবিদ জাস্টিন চ্যান।</p> <p>যুক্তরাষ্ট্রে অনলাইনভিত্তিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান ইয়োর ডায়াবেটিস ডায়েটিশিয়ানের এই প্রতিষ্ঠাতা ব্যাখ্যা করেন, প্রতিনিয়ত মিষ্টি খাবার পরিহার করলে কার্ব খাওয়ার চাহিদা বাড়ে। একই সঙ্গে ক্লান্তিও কাজ করে। ফলে পরে মিষ্টি খাওয়ার অভাববোধ থেকে বেশি মিষ্টি খাওয়া হয়ে যায়। তাই তিনি নির্দিষ্ট খাবার না এড়ানোর পরামর্শ দেন। বরং মিষ্টি ও কার্ব খাওয়ার ক্ষেত্রে পরিমিত হতে বলেন।</p> <p><strong>ধারণা ৩ :</strong> ডায়াবেটিস হলে চিনিমুক্ত খাবার খাওয়া উপকারী।</p> <p><strong>বাস্তবতা : </strong>চিনিমুক্ত খাবার অন্যান্য সমস্যা তৈরি করে, যা প্রস্তুতকারকরা বলতে চায় না। চিনিমুক্ত বা কৃত্রিম চিনিযুক্ত খাবার খাওয়ার অভ্যাস করা মনে হতে পারে খুবই ভালো বিষয়। তবে এই ধরনের খাবারে বেশি লবণ থাকতে পারে, যা চর্বিজাতীয় খাবারের চেয়ে খারাপ।</p> <p>এই তথ্য জানিয়ে নিউ ইয়র্কের হেল্থফুল লেন নিউট্রিশনের পুষ্টিবিদ অ্যামান্ড লেন বলেন, সাধরণভাবে এই ধরনের খাবারে বাড়তি কৃত্রিম স্বাদ যুক্ত করা হয়, যা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী নয়।</p> <p>পাশাপাশি চ্যান বলেন, মাল্টোডেক্সট্রিনের মতো চিনিমুক্ত উপাদান রক্তের গ্লুকোজের মাত্রায় বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। এ ছাড়া কৃত্রিম চিনি হজমতন্ত্রে অস্বস্তি তৈরি করে। যে কারণে কৃত্রিম চিনিযুক্ত খাবারের পরিবর্তে প্রাকৃতিকভাবে যেসব খাবারে শর্করা বা চিনির মাত্রা কম সেগুলো বেছে নেওয়ার পরামর্শ দেন পুষ্টিবিদ লেন।</p> <p><strong>ধারণা ৪ :</strong>  ডায়াবেটিস না থাকলেও নিয়মিত রক্তের শর্করা পরীক্ষা করা ভালো।</p> <p><strong>বাস্তবতা : </strong>এটা অপ্রয়োজনীয়। আর যাদের ডায়াবেটিস হয়নি তাদের ভুল ধারণা দিতে পারে। যাদের ডায়াবেটিস নেই, তাদের সার্বক্ষণিক রক্তের শর্করা পরীক্ষার মাধ্যমে তেমন কোনো লাভ হয় না। বরং খরচ বাড়ে।</p> <p>চ্যান বলেন, আর এই বিষয়ে তেমন কোনো গবেষণাও নেই। সাধারণভাবে বলা যায়, কী খাওয়া হচ্ছে আর কী করছে সেটার ওপর ভিত্তি করে একজন সুস্থ মানুষের রক্তের শর্করার মাত্রা সারা দিনে ওঠা-নামা করে। এই বিষয়টা মাথায় না রেখে রক্তের শর্করার মাত্রা প্রতিনিয়ত পরীক্ষা করলে ভুল ফল পাওয়া যাবে।</p>