<p>হঠাৎ করে প্রশ্ন উঠেছে কালজয়ী গান ‘দিল কি দয়া হয় না’র প্রকৃত স্রষ্টা কে? কয়েক দিন আগে কণ্ঠশিল্পী শাহরিয়ার রাফাত গানটি কাভার করে তাঁর ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশ করতে গিয়েছিলেন। হঠাৎ করে ক্লেইম আসে গীতিকার ও সুরকারের নাম নিয়ে। গীতিকার ও সুরকারের নামের জায়গায় রাফাত দিয়েছিলেন সংগৃহীত। ইউটিউব কর্তৃপক্ষ জানায়, গানটির গীতিকার মনিরুজ্জামান মনির।</p> <p>‘মনের জ্বালা’ (২০১১) ছবিতে গানটি ব্যবহৃত হয়েছিল। এই ছবির গানের কপিরাইট প্রযোজনাপ্রতিষ্ঠান অনুপমের। শেষ পর্যন্ত রাফাত গানটি ইউটিউবে না তুলে সরিয়ে নেন। সেই সঙ্গে গতকাল সামাজিক মাধ্যমে গানটির আসল গীতিকার কে, তা জানতে চেয়ে পোস্ট করেন। তখন একের পর এক কণ্ঠশিল্পী-সুরকার মন্তব্য করে জানান, গানটি পবন দাস বাউলের। তাঁর কণ্ঠেই গানটি শুনে সবাই অভ্যস্ত। তবে কণ্ঠশিল্পী ফাতিমা তুয-যাহরা ঐশী দিলেন নতুন তথ্য। তিনি প্রথম এটি গেয়েছিলেন ২০১৫ সালে।</p> <p><img alt=" কার সৃষ্টি, কে বা স্রষ্টা" height="583" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/09.September/25-09-2024/880900.jpg" width="500" /></p> <p>এয়ারটেল বাজের ইউটিউব চ্যানেলে গানটি প্রকাশের পর পরই শ্রোতারা লুফে নেয়। তবে সে সময়ই কিছু প্রশ্নের সম্মুখীনও হন তিনি। কারণ গানটির কথা ও সুরের জায়গায় লেখা ছিল ‘কালেক্টেড’। পরে ঐশী উদ্যোগ নেন গানটির আসল স্রষ্টা কে তা খুঁজে বের করার। শেষ পর্যন্ত তাঁর বাবার সহযোগিতায় সুনামগঞ্জের দিরাই থানার ভাটিপাড়া ইউনিয়নে গিয়ে খুঁজে পান আসল গীতিকার ও সুরকারকে।</p> <p>জানতে পারেন, বাউল কামাল পাশার লেখা ও সুর করা গান এটি। তিনি ১৯০১ সালে জন্মেছিলেন, মারা গিয়েছিলেন ১৯৮৫ সালে। এয়ারটেল বাজের কারো সঙ্গে পরিচয় না থাকায় পরে আর গানের ক্রেডিট লাইনে কামাল পাশার নাম বসাতে পারেননি ঐশী। তবে যেসব অনুষ্ঠানে তিনি গানটি গেয়েছেন, সব জায়গায় গীতিকার ও সুরকার হিসেবে কামাল পাশার নামই বলেছেন।</p> <p>ঐশী বলেন, ‘এ ধরনের গান আমাদের শেকড়ের কথা বলে। সঠিক তথ্য দিয়ে গানগুলো সবার কাছে পৌঁছে দেওয়া উচিত। এক বছর আগে ওপার বাংলার গুণী কণ্ঠশিল্পী মৌসুমী ভৌমিক দিদি আমার কাছে জানতে চেয়েছিলেন গানটির গীতিকার ও সুরকারের নাম। আমি তাঁকে কামাল পাশার নামই বলেছি।’</p> <p>ঐশী আরো একটি তথ্য দিলেন, ১৯৪৫ সালে পশ্চিমবঙ্গের ‘অভিনয় নয়’ চলচ্চিত্রে গানটি ব্যবহৃত হয়েছিল। যদিও ইউটিউবে গানটি এখন পাওয়া যায় না। সেখানেও আছে কামাল পাশার নাম। শুধু ভারতে নয়, বাংলাদেশেরও কয়েকটি ছবিতে ‘দিল কি দয়া হয় না’ ব্যবহার করা হয়েছে। ২০০২ সালে শেখ দিদারের ‘বিপজ্জনক’ ছবিতে এটি গেয়েছিলেন এন্ড্রু কিশোর ও কনকচাঁপা। সেখানে গীতিকার ও সুরকার হিসেবে নাম দেওয়া হয়েছে আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের! এ গানটিও আছে অনুপমের ইউটিউব চ্যানেলে। একই গান বিভিন্ন জনের নামে কেন, জানতে অনুপমের কর্ণধার আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তাঁর মোবাইল নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়। প্রতিষ্ঠানটির সিইও মহসীন মেহেদীর সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘আমরা গানের ক্ষেত্রে ছবিতে যে ক্রেডিট লাইন থাকে সেটা ব্যবহার করি। একেকটা ছবিতে গীতিকার ও সুরকার একেকজন থাকে। আমাদের অনেক কনট্যান্ট। সব কনট্যান্ট তো যাচাই-বাছাই করে আপলোড দিতে পারি না। সে ক্ষেত্রে পরিচালক ও প্রযোজকদের কাছে জিজ্ঞেস করি। তাঁরা যেটা বলেন সেটাই ক্রেডিট লাইনে দিই। এ গানটি নিয়ে আজ (গতকাল) অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা ক্রেডিট লাইন বদলে পবন দাস বাউলের নাম দিয়েছি।’ কামাল পাশার কথা বলতেই মহসীন মেহেদী বলেন, ‘আমরা আসলে সঠিক তথ্যের অপেক্ষায় আছি। যদি গানটি তাঁর হয়ে থাকে, অবশ্যই আমরা নাম দেব। এখানে আমাদের কোনো ব্যক্তিগত স্বার্থ নেই।’</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="নাইজেরিয়ান গায়কের সঙ্গে জুটি বাঁধলেন নোরা" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/09/25/1727247251-e2661395973a738253ee03e9bc68468b.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>নাইজেরিয়ান গায়কের সঙ্গে জুটি বাঁধলেন নোরা</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/entertainment/2024/09/25/1428757" target="_blank"> </a> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="গিয়েছিলেন গরুর খাবার আনতে, প্রতিবেশীর সেপটিক ট্যাংকে মিলল লাশ" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/09/25/1727247528-809b99ad3e35adf2e595c02b864fb120.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>গিয়েছিলেন গরুর খাবার আনতে, প্রতিবেশীর সেপটিক ট্যাংকে মিলল লাশ</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/country-news/2024/09/25/1428758" target="_blank"> </a></div> </div> </div> </div> <p>গানটি আরটিভির রিয়ালিটি শোতে কাভার করেছেন কণ্ঠশিল্পী শারাফ আমিরা। সেখানেও গানটির গীতিকার হিসেবে নাম দেওয়া মনিরুজ্জামান মনিরের, সুরকার আলী আকরাম শুভ। একইভাবে আরটিভির বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠানেও গেয়েছেন শিল্পীরা। সেগুলোও আপলোড করা হয়েছে ইউটিউবে। বিষয়টি নিয়ে চ্যানেলটির প্রগ্রাম ব্যবস্থাপক নূর হোসেন হীরা বলেন, “সাধারণত এ ধরনের গানগুলোতে গীতিকার ও সুরকারদের সঠিক তথ্য পাওয়া কঠিন হয়ে যায়। আমরা যখন জানতে পারি সঠিক সুরকার ও গীতিকারের নাম, তখনই পরিবর্তন করে দিই। এমনও হয়েছে, কোনো গান অনেক ভিউ হয়েছে, তবে গানটি নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে। আমরা সেটা নামিয়ে দিই। আসলে কেউ তো ভুলের ঊর্ধ্বে নয়। ঝগড়া বা কাউকে ছোট করে নয়, আলোচনা ও যুক্তি দিয়ে ভুল সংশোধন হোক। আমাদের মাঝে বিবেধ যত বাড়বে, ততই ইন্ডাস্ট্রি ছোট হবে। ‘দিল কি দয়া হয় না’ গানটির সঠিক সুরকার ও গীতিকারের নাম জানতে পারলে আমরা সঙ্গে সঙ্গে সংশোধন করে দেব।”</p> <p>এ বিষয়ে কথা হয় বাংলাদেশ কপিরাইট অফিসের ‘রেজিস্ট্রার অব কপিরাইটস’ (অতিরিক্ত সচিব) মো. দাউদ মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে প্রতিদিন অনেক গান কপিরাইটের জন্য আবেদন পড়ে। বলতে পারেন, হাজার হাজার গান কপিরাইট হয়েছে। তবে এ গানটা কপিরাইটের জন্য কেউ আবেদন করেছে কি না বলতে পারছি না। তবে কেউ যদি আবেদন করেন, প্রমাণসাপেক্ষে আমরা তাঁকে কপিরাইট দেব। আবার দেখা যাচ্ছে, কেউ যদি গানটির ভুয়া কপিরাইট নিয়ে থাকেন, তাহলে সেটা প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেব। আমাদের কাছে আগে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আসতে হবে।’</p> <p>পবন দাস বাউলের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তাঁকে পাওয়া যায়নি। কণ্ঠশিল্পী জয় শাহরিয়ার জানান, বেশির ভাগ সময়ই গুণী এই বাউলশিল্পী থাকেন দেশের বাইরে। ফলে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা কঠিন। জয় আরো বলেন, ‘আমি যতদূর জানি গানটি তাঁরই লেখা ও সুর করা এবং গাওয়া।’</p> <p>গীতিকার মনিরুজ্জামান মনিরকে নিয়েই শুরু গানটির বিতর্ক। তবে এ বিষয়ে জানতে তাঁকে বারবার ফোন করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। তবে গানটি যে তাঁর লেখা নয়, সেটা নিশ্চিত করেছেন সংগীতের অনেকেই। বিশেষ করে বাংলাদেশে কপিরাইট নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করা কণ্ঠশিল্পী ও সুরকার জুয়েল মোর্শেদ বলেন, ‘এ গানটা বাংলাদেশের কারো নামে কপিরাইট করা নয়, এটা নিশ্চিত।’</p> <p>এদিকে পবন দাস বাউলের সঙ্গে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন বাংলাদেশের লাবিক কামাল গৌরব। বাংলাদেশসহ ইউরোপ-আমেরিকার বিভিন্ন স্টেজে পবন দাসের সঙ্গে ‘দিল কি দয়া হয় না’ গানটিতে পারফরমও করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি কখনো পবনদার মুখে এই গানের স্রষ্টা হিসেবে নিজেকে দাবি করতে শুনিনি। এমনকি মঞ্চে অনেক সময় তিনি একই সুরে নতুন কথায় গানটি গেয়েছেন। এ ধরনের গানগুলোতে সাধারণত তৃতীয় বা চতুর্থ অন্তরায় গিয়ে আমরা গানের স্রষ্টার নাম পাই। তবে আশ্চর্যজনক ব্যাপার হলো, এই গানে সেটা নেই। ফলে অনেকেই দাবি করতে পারেন। তবে সঠিক দাবি করতে হলে সেই স্রষ্টার বয়স অন্তত আশি-নব্বই বছর হতে হবে। কারণ গানটি কিন্তু আজকের না!’</p> <p>বাংলা একাডেমি পুরস্কার পাওয়া লোক সংস্কৃতি গবেষক এবং নাট্যকার সাইমন জাকারিয়া জানালেন ভিন্ন তথ্য। তিনি বলেন, ‘অনেক দিন ধরেই আসলে বিতর্কের সৃষ্টি। একদল বলছে, কামাল পাশা গানটির স্রষ্টা। তবে সেটার সপক্ষে এখনো যুক্তি দেখাতে পারেনি। আবার পবন দাস বাউলও দাবি করছেন না গানটি তাঁর। তিনি থাকেন বিদেশে। ফলে আন্তর্জাতিক কপিরাইটসের বিষয়টি তিনি জানেন। যদি গানটি তাঁর হতো তাহলে এত দিন নিবন্ধন করতেন। আমার জানা মতে, তিনি সেটা করেননি। আমার বিশ্বাস, তিনি বাউলগোষ্ঠীর সঙ্গে দীর্ঘদিন ওঠাবসা করেন। ফলে বিতর্কিত কিছু করবেন না। গবেষণায় আমার মনে হয়েছে, আসলে গানটি শত বছরেরও আগের। তবে আধুনিক ভাবধারার কিছু শব্দ এখানে কেউ না কেউ সংযোজন ও বিয়োজন করেছেন। সেটাও যে কারা করেছেন, তার কোনো প্রমাণ নেই। এক কথায়, গানটির প্রকৃত স্রষ্টা পাওয়া এখনো সম্ভব হয়নি।’</p>