<p style="text-align:justify">অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে চারপাশ থেকে ওয়ান-ইলেভেন ও স্বৈরাচারের প্রেতাত্মারা ঘিরে ধরেছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের আহ্বায়ক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘ওই প্রেত্মাতাদের থেকে বের হয়ে আসতে না পারলে ওরা আপনাদের (অন্তর্বর্তী সরকার) গিলে খাবে। এ বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।’</p> <p style="text-align:justify">মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সাবেক সভাপতি মরহুম রুহুল আমিন গাজীর স্মরণে আয়োজিত নাগরিক শোকসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। </p> <p style="text-align:justify">সভায় ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘বর্তমান সরকার ওয়ান-ইলেভেনের সুবিধাভোগীদের চতুর্দিকে বসিয়েছে। শেখ হাসিনার সুবিধাভোগীদের সঙ্গে নিয়ে সরকার চালাচ্ছে। সরকারের বয়স এখন দুই মাস হলেও তাদের ঘুম ভাঙেনি। ছাত্র-জনতা এটা মেনে নেবে না। মজলুম সাংবাদিক মাহমুদুর রহমানকে হাজিরা দেওয়ার পর জেলে যেতে হবে, এমন স্বাধীনতা তো আমরা চাইনি। দুর্নীতিবাজ, অপরাধীদের সরকার খুঁজে পায় না, শুধু মাহমুদুর রহমানকে জেলে পাঠাতে পারে।’</p> <p style="text-align:justify">প্রয়াত রুহুল আমিন গাজীর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ডা. জাহিদ বলেন, ‘তিনি মানবিক গুণাবলির মানুষ ছিলেন। প্রতিকূল পরিস্থিতিতে পেছনে কে আছেন সেটি খেয়াল রাখেননি। সব সময় সাহস নিয়ে চলেছেন। সাংবাদিকদের যেকোনো দাবি আদায়ে তিনি সব সময় সোচ্চার ছিলেন। তাকে যখন জেলখানায় নেওয়া হয়েছে, তখন খুব অসুস্থ ছিলেন। সরকার তাকে চিকিৎসা দেয়নি। যার ফলে তার অসুখ সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। তাকে ফ্যাসিস্টরা মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছে। দেশে মানবাধিকার, আইনের শাসন নিশ্চিত হলেই রুহুল আমিন গাজীর আত্মা শান্তি পাবে।’</p> <p style="text-align:justify">জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘রুহুল আমিন গাজী সব সময় অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর হিসেবে কাজ করেছেন। অনেকেই অন্যায়ের সঙ্গে আপস করেছে। কিন্তু তিনি কোনো দিন অন্যায়ের কাছে মাথানত করেননি। রাজপথে ও কলমে সব সময় তিনি অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছেন। স্বৈরাচারী সরকার তাকে ১৮ মাস কারাগারে আটক রেখেছে। কিন্তু তিনি মাথানত করেননি।’ আমার দেশের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের মুক্তির দাবি জানান তিনি।</p> <p style="text-align:justify">জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি কবি হাসান হাফিজ বলেন, ‘সাংবাদিক রুহুল আমিন গাজী ছিলেন নির্ভীক এবং সাহসী নেতৃত্বের গুণাবলিসম্পন্ন মানুষ। তিনি সততা, বিশ্বস্ততা এবং বলিষ্ঠ ভূমিকা পালনের মাধ্যমে দীর্ঘদিন সাংবাদিক সমাজে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তার গ্রহণযোগ্যতা ছিল সর্বাধিক এবং সর্বমহলে।’ তাকে নিয়ে স্মারকগ্রন্থ প্রকাশের প্রস্তাব দেন এবং অনতিবিলম্বে মাহমুদুর রহমানকে মুক্তি দাবি করেন তিনি।</p> <p style="text-align:justify">অন্তর্বর্তী সরকারের চারপাশে এখনো ফ্যাসিবাদের দালালরা জায়গা নিয়ে বসে আছে বলে মন্তব্য করেন বিএফইউজের মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘দেশের মানুষের প্রতি সরকারের দায়বদ্ধতা অনেক, কোনোভাবেই হত্যাকারীদের দোসরদের স্থান এই সরকারের পাশে হতে পারে না। এতে সরকারের লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হবে না।’ তিনি আরো বলেন, মুক্ত গণমাধ্যমের জন্য ঐক্য জরুরি। সবাই সরব থেকে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনাতে হবে।</p> <p style="text-align:justify">স্মরণসভায় বক্তারা বলেন, রুহুল আমিন গাজী স্বাধীন সাংবাদিকতার পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছিলেন। তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের অধিকার, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা এবং মত প্রকাশের জন্য লড়াই করেছেন। একই সঙ্গে গণমাধ্যমের ওপর সরকারের চাপ, সাংবাদিকদের ওপর হামলা এবং স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য প্রয়োজনীয় পরিবেশ তৈরির পক্ষেও সবসময় সরব ছিলেন। তার শূন্যস্থান পূরণ হওয়ার নয়। তিনি এমন এক সময় চলে গেছেন, যখন তার প্রয়োজন ছিল।</p> <p style="text-align:justify">বিএফইউজে ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) আয়োজিত স্মরণসভায় সভাপতিত্ব করেন ডিইউজে সভাপতি মো. শহিদুল ইসলাম। বক্তব্য দেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার ও সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি কবি হাসান হাফিজ, বিএফইউজের মহাসচিব ও সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সদস্যসচিব কাদের গনি চৌধুরী, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, মরহুম রুহুল আমিন গাজীর ছেলে আদনান আরবার, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস হোসেন, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সভাপতি মোরসালিন নোমানী, প্রবীণ সাংবাদিক মোস্তফা কামাল মজুমদার।</p> <p style="text-align:justify">এ ছাড়া বক্তব্য দেন ফাস্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল মান্নান, বিএফইউজের ভারপ্রাপ্ত ওবায়দুর রহমান শাহীন, ডিইউজে সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আলম, সাবেক সাধারণ সম্পাদক বাকের হোসেন, আমার দেশের বার্তা সম্পাদক জাহেদ চৌধুরী, ডিইউজে সিনিয়র সহসভাপতি রফিক মুহাম্মদ ও সহসভাপতি রাশেদুল হক, বিএফইউজে সহসভাপতি এ কে এম মহসীন ও প্রচার সম্পাদক শাজাহান সাজু, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. শাহনেওয়াজ, ফেনী সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি সিদ্দিক আল মামুন, কক্সবাজার সাংবাদিক ইউনিয়নের সহসভাপতি মো. জসিম উদ্দিন প্রমুখ।</p>