<p>শেরপুরের খাজা বদরুদ্দোজা হায়দার ওরফে দোজা পীরের দরবারে (মুর্শিদপুর পীরের দরবার) হামলা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগের ঘটনায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) রাতে ফেসবুকে পীরের মুরিদদের দরবারের দিকে লং মার্চের ঘোষণা এবং পীরবিরোধীদের জমায়েত হওয়ার আহ্বানকে কেন্দ্র করে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। </p> <p>আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী সতর্ক অবস্থানে আছে। এ ছাড়া স্থানীয় কুসুমহাটি বাজার এবং জামতলা এলাকার দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। লছমনপুর এবং আশপাশের এলাকাবাসীর মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা লক্ষ করা যায়। প্রায় ২০০ একর জায়গা নিয়ে গড়ে উঠেছে এই দরবার শরিফ।</p> <p>মুর্শিদপুর দরবার শরিফে হামলার পর পীর-ভক্তরা চলে গেলে লুটপাট চালায় দুর্বৃত্তরা। বৃহস্পতিবার দিনের বেলায় গরু-ছাগল, ভেড়া, দুম্বা, ইট, টিন, টাকা, হাঁড়ি-পাতিল, ডেচকি, পুকুরের মাছসহ বিভিন্ন ধরনের মাল লুট করা হয়।</p> <p>শুক্রবার সন্ধ্যার পর থেকে দরবারের শত শত পুরনো গাছ কাটা এবং ভবনের টিন, লোহার অ্যাঙ্গেলসহ বিভিন্ন ধরনের মাল গাড়ি ভর্তি করে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। বৃহস্পতিবার সারা রাত এবং শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত চলে এমন লুটের তাণ্ডব।</p> <p>সকাল ১০টার দিকে জামালপুর-ব্রহ্মপুত্র সেতুসংলগ্ন এলাকায় পীর-ভক্তদের একটি মিছিল দরবারের দিকে আসার চেষ্টা করলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যরা বাধা দেন। কিন্তু দুপুর ১টার দিকে বিভিন্ন এলাকা থেকে লাঠিসোঁটা নিয়ে মিছিল করে প্রায় দুই হাজারের মতো পীর-ভক্ত দরবারের দখল নেয়। সেই সময় দরবারের ভেতরে ও বাইরে কাটা গাছ ও মাল বোঝাই করা অবস্থায় অন্তত ১৩টি যানবাহনে আগুন দেয় তারা। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে হাজির হয়ে পরী-ভক্তদের নিবৃত্ত করেন।</p> <p>দরবারে লুটপাটের অভিযোগে তিনজনকে আটক করা হয়। পীর-ভক্তরা প্রায় তিন ঘণ্টা দরবারে অবস্থান করে ক্ষয়ক্ষতি ও লুটপাটের ভয়াবহ চিত্র দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিচার দাবি করেন।</p> <p>পীর-ভক্তদের আগমনের সংবাদ পেয়ে শেরপুর শহরের অষ্টমীতলা এলাকায় পীরবিরোধীরা জড়ো হতে চেষ্টা করেন। এক পর্যায়ে তারা শেরপুর-জামালপুর সড়কের শেরীব্রিজ এলাকায় কাঠের গুঁড়ি ফেলে সড়ক অবরোধের চেষ্টা করেন। এ জন্য কিছু সময় সেখানে যান চলাচল ব্যাহত হয়। পরে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশ হাজির হয়ে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দিলে পরিস্থিতি শান্ত হয়। </p> <p>পুলিশ সুপার মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে লছমনপুর এলাকার পরিবেশ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী মোতায়েন ও টহল জোরদার করা হয়েছে। </p> <p>৫ আগস্টের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকেই শরিয়ত পরিপন্থী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে শেরপুর সদরের লছমনপুর এলাকায় খাজা মোহাম্মদ বদরুদ্দোজা হায়দার ওরফে দোজা পীরের মুর্শিদপুর দরবার শরিফের কার্যক্রম বন্ধের হুমকি দিচ্ছিলেন স্থানীয় কওমিপন্থী মাদরাসার শিক্ষক-ছাত্র ও তাদের অনুসারীরা। এ নিয়ে বেশ কয়েকবার উভয় পক্ষের মাঝে দ্বন্দ্ব-সংঘাতের ঘটনা ঘটে। </p> <p>২৬ নভেম্বর ভোরে দোজা পীরের দরবারে হামলার ঘটনা ঘটে। এ সময় স্থানীয় তৌহিদি জনতা ও দরবারের মুরিদদের মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত ১৩ জন আহত হন। ২৭ নভেম্বর সকালে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সরকারবিরোধী পক্ষের আহত হাফেজ উদ্দিনের মৃত্যু হয়। এ মৃত্যুকে কেন্দ্র করে তৌহিদি জনতা ২৮ নভেম্বর পীরের দরবারে হামলা চালিয়ে গুঁড়িয়ে দেয়।</p>