<p>দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে সবার ছোট জোবায়ের ছিলেন মেধাবী। এইচএসসিতে জিপিএ ৫ পাওয়ার পর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পেয়েও বিচারক হওয়ার আশায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এলএলবি বেছে নেন তিনি। তার স্বপ্ন ছিল ন্যায়বিচারক হওয়ার। গুলিতে স্বপ্নের পরিসমাপ্তি হয়। </p> <p>৫ আগস্ট ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে পুলিশের এলোপাতাড়ি গুলিতে প্রাণ হারান ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার সৈয়দাবাদ গ্রামের জাহাঙ্গীর আহমেদ খানের ছেলে জোবায়ের ওমর খান।</p> <p>জোবায়েরের বাবা ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ফর বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট জাহাঙ্গীর আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আন্দোলনের শুরু থেকেই সক্রিয় ছিল জোবায়ের। মিরপুরের বাংলাদেশ প্রফেশনাল ইউনিভার্সিটি (বিইউপি)-এর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সমন্বয়কারী ছিল জোবায়ের। তার কাজ ছিল সবাইকে জড়ো করে আন্দোলনে নিয়ে যাওয়া। শহীদ মুগ্ধও ওই ইউনিভার্সিটিরই ছাত্র ছিল।’</p> <p>তিনি আরো বলেন, ‘শুরুতে পরিবার থেকে তাকে বাধা দেওয়া হয়েছিল। জীবনের ঝুঁকির কথা বলা হয়েছিল। তার একটাই কথা যে আন্দোলনে না গেলে বন্ধুদের রক্তের সঙ্গে বেঈমানি হবে। আন্দোলনে তার অনেক বন্ধু হতাহত হচ্ছে। এ অবস্থায় তার বসে থাকা ঠিক হবে না। একের পর এক প্রাণহানিতে সে আরো বেশি আবেগতাড়িত হয়ে পড়ে। জেদ চেপে বসে তার মনে। সেই থেকে দিনের পর দিন সকালে বের হয়ে রাতে ফিরত।’</p> <p>কসবা উপজেলার সৈয়দাবাদ গ্রামে চিরনিদ্রায় শুয়ে আছেন জোবায়ের। তবে তার বেড়ে ওঠা ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে। পরিবারসহ তারা থাকতেন নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ কদমতলীতে। দনিয়া এ কে হাই স্কুল থেকে পিএসসি, জেএসসি ও এসএসসিতে উত্তীর্ণ হন জোবায়ের। নটর ডেম কলেজ থেকে জিপিএ ৫ পেয়ে ২০২১ সালে এইচএসসি পাস করেন। জোবায়ের বিইউপিতে এলএলবি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। </p> <p>পারিবারিক সূত্র জানায়, ৫ আগস্ট সকালে নাশতা খেয়ে বাড়ি থেকে বের হন তিনি। দুপুর ২টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিল দনিয়া কলেজ থেকে শাহবাগ মোড়ে যাওয়ার পথে যাত্রাবাড়ী থানার দক্ষিণ দিক দিয়ে পার হওয়ার সময় পুলিশের এলোপাতাড়ি গুলিতে আহত হন জোবায়ের। সহযোদ্ধারা তাকে উদ্ধার করে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করায়। সন্ধ্যা ৬টার দিকে জোবায়রকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।</p> <p>জাহাঙ্গীর আহমেদ খান জানান, ছেলে মারা যাওয়ার খবরটি তাকে অনেক পরে জানানো হয়। প্রথমে বলা হয় জোবায়েরকে হাসপাতালে আনার পর পালস পাওয়া যাচ্ছে না। তবে এরই মধ্যে তিনি বুঝে গেছেন, ছেলে বেঁচে নেই। রাতেই তার লাশ অ্যাম্বুল্যান্সে করে কসবার গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসা হয়।</p> <p>মুগ্ধ ও জোবায়েরের স্মৃতিকে ধরে রাখতে তাদের কলেজের নেওয়া উদ্যোগকে স্বাগত জানান জাহাঙ্গীর আহমেদ। পাশাপাশি সব শহীদের স্মৃতিতে সরকারি উদ্যোগে কিছু করা হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন তিনি।</p>