<p>মানুষের সৌন্দর্যের অন্যতম অনুষঙ্গ চুল ও দাড়ি। এগুলো মানুষের ব্যক্তিত্বকে ফুটিয়ে তোলে। যুগে যুগে চুল-দাড়ি নিয়ে মানুষের ভাবনার অন্ত নেই। সেই কারণে কেশ বিন্যাসের কারিগর বা নরসুন্দরদের কদর ছিল ব্যাপক। তবে আধুনিক সভ্যতার অগ্রগতির ফলে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে এসেছে পরিবর্তন। এখন শহর-বন্দর ও গ্রামের হাট-বাজারে এসি এবং নন-এসি সেলুন রয়েছে। এমনকি পুরুষদের জন্য আলাদা পার্লারও দেখা যায়। এসব সেলুনে চুল-দাড়ি কাটার জন্য আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবস্থাও আছে।</p> <p>তবে সময়ের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রামবাংলার সেই চিরচেনা দৃশ্য—বটগাছের ছায়ায়, খেয়াঘাটে, ফুটপাতে বা জলচৌকিতে বসে নরসুন্দরের হাঁটুর কাছে মাথা পেতে দিয়ে চুল-দাড়ি কাটানোর অভ্যাস। যদিও এখনো গ্রামাঞ্চলের কোনো কোনো হাট-বাজারে ভ্রাম্যমাণ নরসুন্দরদের দেখা মেলে। তাঁরা চুল-দাড়ি কাটার যন্ত্রপাতি নিয়ে বসেন। হাটে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে আসা ক্রেতারাই তাদের কাস্টমার।</p> <p>বর্তমানে এ পেশায় নিয়োজিত আছেন হাতে গোনা কয়েকজন। আয়-রোজগার কম হওয়ায় এবং পেশাটি তেমন লাভজনক না হওয়ায় অনেকেই অন্য পেশায় চলে গেছেন।</p> <p>বুধবার সরেজমিনে নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার প্রাচীনতম মালঞ্চি বাজারে গিয়ে দেখা যায়, এক নরসুন্দর ইটের ওপর বসে আছেন। এক কাস্টমার তাঁর হাঁটুর কাছে মাথা পেতে দিয়ে পিঁড়িতে বসে চুল কাটাচ্ছেন। তাঁদের পাশে কাপড়ের ওপর চুল ও দাড়ি কাটার বিভিন্ন যন্ত্রপাতি রাখা। </p> <p>জানা যায়, ওই নরসুন্দরের নাম উপেন। তিনি পাকা ইউনিয়নের মাড়িয়া এলাকার মৃত মাখনের ছেলে।</p> <p>ফাগুয়াড়দিয়াড় ইউনিয়নের ঠেংগামারা থেকে মালঞ্চি বাজারে আসা মজির উদ্দীন বলেন, ছোটবেলায় বাবার সঙ্গে এসে এভাবেই চুল কাটাতাম। এখনো এখানেই চুল-দাড়ি কাটাই এবং আমার সন্তানদেরও এখানে আনি। সেলুনে চুল কাটাতে ৫০ থেকে ১০০ টাকা লাগে, কিন্তু এখানে ২০-৩০ টাকায় চুল ও দাড়ি কাটা যায়।</p> <p>উপজেলার পৌর এলাকার আবদুল করিম বলেন, আমাদের এলাকার অনেকেই এখনো এই ভ্রাম্যমাণ নরসুন্দরদের দিয়ে চুল-দাড়ি কাটান। অল্প খরচেই কাজটা ভালো হয়।</p> <p>নরসুন্দর উপেন বলেন, এ পেশা আমার বাবার ছিল। বাবার কাছ থেকেই শিখেছি। চার যুগ ধরে এভাবেই চুল-দাড়ি কেটে জীবিকা নির্বাহ করছি। বিভিন্ন হাটে গিয়ে প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা আয় করি। তবে যুগের পরিবর্তনে কাস্টমার কমে গেছে, তাই অনেকেই এই পেশা ছেড়ে দিয়েছেন।</p> <p>বীর মুক্তিযোদ্ধা মাজেদুর রহমান বলেন, আগের দিনে প্রায় প্রতিটি মানুষই হাঁটুর কাছে মাথা পেতে চুল কাটানোর স্মৃতি লালন করত। কিন্তু এখন তা প্রায় বিলুপ্তির পথে। নতুন প্রজন্মের কাছে এই ভ্রাম্যমাণ নরসুন্দর কেবলই ইতিহাস।</p> <p>গ্রামীণ নরসুন্দরদের এই ঐতিহ্যবাহী পেশাটি বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে। তবু কিছু মানুষ এই পেশাকে ধরে রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, যা আমাদের সংস্কৃতির অংশ হিসেবে বিশেষ মূল্যবান।</p>