<p style="text-align:justify">ঝিনাইদহের মহেশপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের ছোড়া গুলিতে বাঁ চোখ হারানোর পথে খুলনা নর্দান ইউনিভার্সিটির বিবিএ দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী হাসিব রহমান অভিক। পরিবারের আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে বর্তমানে বাড়িতে বিনা চিকিৎসায় চোখের যন্ত্রণায় ছটফট করছেন তিনি। বাঁ চোখে একটি গুলিসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে চারটি গুলি বের করার সঠিক চিকিৎসা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। উন্নত চিকিৎসা জন্য সরকারি-সরকারিসহ সবার কাছে আর্থিক সহযোগিতা চেয়েছে অভিকের পরিবার।</p> <p style="text-align:justify">জানা যায়, গত ৫ আগস্ট দুপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা মহেশপুর শহরের শাপলা চত্বরে (পুরাতন পৌরসভা মোড়) আন্দোলনরত অবস্থায় পুলিশ এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়ে। এতে গুরুতর আহত হন মহেশপুর পৌর শহরের হামিদপুর গোডাউন পাড়া গ্রামের মোজাফ্ফর রহমানের ছেলে খুলনা নর্দান ইউনিভার্সিটির বিবিএ দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র হাসিব রহমান অভিক।</p> <p style="text-align:justify">তার বাঁ চোখে ১টি, নাকে, মুখে ও গোলায় মোট ৫টি ছররা গুলিবিদ্ধ হয়। পরে তাকে মহেশপুর ৫০ শয্যার হাসপাতালে নেওয়া হয়। এরপর যশোর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এক দিন চিকিৎসার পর উন্নত চিকিৎসার জন্য স্থানান্তর করা হয় বাংলাদেশ চক্ষু হাসপাতালে। সেখানে চক্ষুবিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. নিয়াজ আবদুর রহমানে কাছে চিকিৎসা করান। সেখানে পর পর দুইবার অপারেশন করেও চোখের রেটিনায় মধ্যে আটকে থাকা গুলি বের করা সম্ভব হয়নি। চিকিৎসকরা উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে দেশের বাইরে নিয়ে যেতে বলেছেন। তবে টাকার অভাবে দেশের বাইরে যাওয়া সম্ভব হয়নি। বর্তমানে বাড়িতে বিনা চিকিৎসায় চোখের যন্ত্রণায় ছটফট করছেন মেধাবী এই শিক্ষার্থী।</p> <p style="text-align:justify">বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) সকালে পৌর শহরের হামিদপুর গোডাউন পাড়া বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বিছানায় শুয়ে আছেন অভিক। তার বাঁ চোখে ব্যান্ডেজ। অভিক বলেন, ওই দিন পুলিশের ছোড়া প্রথম গুলির শিকার আমি। ৫টি ছররা গুলি লাগে চোখে, নাক-মুখে ও গোলায়। একটা গুলি বের হলেও বাকি চারটা গুলি এখনো রয়েছে। দেশের চিকিৎসা প্রায় শেষ। অনেক টাকা ব্যয় করে আমার পরিবার আমাকে ঢাকায় চিকিৎসা করান। তার পরও চোখটা ভালো হলো না। বাঁ চোখে তেমন কিছুই দেখতে পারি না, চোখের ব্যথা ও মাথা যন্ত্রণায় রাতে ঘুমাতে পারি না। ডাক্তাররা বলেছে দেশের বাইরে নিয়ে চিকিৎসা করাতে হবে বলতেই হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন অভিক।</p> <p style="text-align:justify">অভিকের বাবা মোজাফ্ফর রহমান বলেন, ছেলের চিকিৎসার জন্য তারা দেশে সাধ্যমতো চেষ্টা করেছেন। কিন্তু তাতে কোনো লাভ হয়নি। উন্নত চিকিৎসার জন্য অভিকে সিঙ্গাপুর বা চেন্নাই নিয়ে যেতে বলছে চিকিৎসক। বিদেশে চিকিৎসার জন্য ৪০-৫০ লাখ টাকা লাগতে পারে বলে তারা জানিয়েছে। বিশাল অঙ্কের এই টাকা কোথায় পাবো, কে দেবে? এমন পরিস্থিতিতে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে পুরো পরিবার।</p> <p style="text-align:justify">অভিকের মা হোসনে আরা বেগম বলেন, অভিক সেদিন সবাইকে ফাঁকি দিয়ে কোটাবিরোধী আন্দোলনে গেছে। পরে জানতে পারি তার বাঁ চোখসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুলি লেগেছে। চোখের গুলি বের করাসহ পরিপূর্ণ সু-চিকিৎসার প্রচুর অর্থের প্রয়োজন যা তাদের পক্ষে ব্যয় করা সম্ভব হচ্ছে না। সে কারণে ছেলেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে সকলের সহযোগিতা চান বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।</p> <p style="text-align:justify">বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মহেশপুর উপজেলার অন্যতম সমন্বয়ক মেহেদী হাসান বাপ্পি বলেন, অভিক আমাদের আন্দোলনের অন্যতম সহযোদ্ধা। আন্দোলনরত অবস্থায় পুলিশের ছোড়া গুলিতে আহত হয় অভিক। তার বাঁ চোখসহ শরীরে এখনো ৪টি গুলি রয়েছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাহিরে নিয়ে যেতে বলেছে চিকিৎসকরা। এতে প্রায় ৪০-৫০ লাখ টাকা লাগতে পারে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমম্বয়কদের অভিকের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন। ছেলেকে সুস্থ দেখতে দেশের সকলের কাছে আর্থিক সহায়তা কামনা করেন তার পরিবার।</p>