<p style="text-align:justify">তিন মাস পেরিয়ে গেলেও থামছে না ছেলেহারা মায়ের আর্তনাদ। কেউ দেখতে গেলে বা ছেলের নাম ধরে ডাকলেই কেঁদে ওঠেন। তার কান্না থামানোর যেন কেউ নেই। এমন অবস্থা কোটা আন্দোলনে ঢাকার উত্তরায় পুলিশের গুলিতে নিহত সাব্বির হোসেনের মা রাশিদা বেগমের।</p> <p style="text-align:justify">কৃষক আমোদ আলী ও রাশিদা খাতুন দম্পতির বড় ছেলে সাব্বির হোসেন। বাবা-মা, ছোট ভাই ও একমাত্র বোনের দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন সাব্বির। বোন সুমাইয়া খাতুন স্থানীয় ডিএম কলেজে লেখাপড়া করেন আর ছোট ভাই সাদিক হোসেন স্থানীয় একটি মাদরাসার ছাত্র।</p> <p style="text-align:justify">সম্প্রতি নিহত সাব্বির হোসেনের গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার মির্জাপুর গ্রামে পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে গেলে এমন হৃদয় বিদারক দৃশ্য দেখা যায়।</p> <p style="text-align:justify">নিহত সাব্বির হোসেনের মা রাশিদা বেগম বলেন, ‘লেখাপড়ায় খুব একটা ভালো ছিল না আমার ছেলে। প্রাইমারি শেষে পার্শ্ববর্তী আমেনা খাতুন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে কয়েক বছর লেখাপড়া করে। পরে মাদরাসায় ভর্তি করে দিই। সেখানে কোরআনে হাফেজ পর্যন্ত পড়ে সে। তারপর আর পড়াশোনা করেনি সাব্বির। ৬ বছর আগে ঢাকায় গিয়ে টাইলস মিস্ত্রি হিসেবে কাজ শুরু করে সাব্বির। মাঝে কিছুদিন বাড়িতে ছিল। পরে আবার ঢাকায় গিয়ে উত্তরার ১৩ নম্বর সেক্টরে অর্গান লিমিটেড কেয়ার নামে একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি শুরু করেন।’</p> <p style="text-align:justify">সাব্বিরের থাকার ঘরে গিয়ে দেখা যায়, আগের মতই তার বিছানাটি রয়েছে। আলনায় ঝুলছে তার ব্যবহৃত জামাকাপড়। মা রাশিদা খাতুন সারাক্ষণ ছেলের ব্যবহৃত জিনিসপত্র নাড়াচাড়া আর স্মৃতি নিয়ে আহাজারি করেন।</p> <p style="text-align:justify">বাবা আমোদ আলী বলেন, ‘সাব্বিরের মোটরসাইকেলের প্রতি খুব আগ্রহ ছিল। প্রায়ই বলতো একটি মোটরসাইকেল কিনে দিতে। আমি তাকে বুঝিয়ে বলতাম কয়টা গরু পুষেছি। ওগুলো বিক্রি করে তোমার মোটরসাইকেল কিনে দেব। মারা যাওয়ার আগের রাতেও সাব্বির মোবাইল করেছিল। আমাদের সকলের খোঁজ-খবর নিয়েছিল। ’</p> <p style="text-align:justify">জানা যায়, কোটা আন্দোলন চলাকালে গত ১৮ জুলাই তুমুল সংঘর্ষ, গোলাগুলি চলছিল উত্তরায়। আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন সাব্বির হোসেন। বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে একটি ওষুধের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এ সময় হঠাৎ গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। </p> <p style="text-align:justify">আন্দোলনকারীরা তাকে কাছের একটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরদিন ১৯ জুলাই ভোরে তার মরদেহ নিজ গ্রামে পৌঁছে। সাব্বিরের মরদেহ সকাল ১০টার দিকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।</p> <p style="text-align:justify">বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঝিনাইদহের সমন্বয়ক রত্না খাতুন জানান, ‘আমাদের পক্ষ থেকে নিহত সাব্বিরের পরিবারকে নিয়মিত দেখাশোনা করা হচ্ছে। শহীদ সাব্বিরের প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত ইতিমধ্যে কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে।’<br />  </p>