<p style="text-align:justify">‘তোমার পায়ে গুলি লাগছে আন্দোলনে আর যাইও না। তোমার কিছু হলে আমাদের কে দেখবে? আমরা তো অসহায় হয়ে পড়ব। চিন্তা কইরো না, ছাত্ররা যদি আন্দোলন করতে পারে আমি ঘরে বসে থাকব কেমনে। আমিও আন্দোলনে যাব। দরকার হলে শহীদ হব। দেশের জন্য জীবন দিয়া দেব।’</p> <p style="text-align:justify">বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গত ৪ আগস্ট দুপুরে রাজধানীর মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বর এলাকায় আইডিয়াল কলেজের সামনে গুলিতে নিহত রিকশাচালক মো. জুনায়েদ ভূঁইয়া সঙ্গে স্ত্রীর হাফসা আক্তারের শেষবারের মতো এসব কথা হয়।</p> <p style="text-align:justify">জানা যায়, জুনায়েদ ভূঁইয়ার বাড়ি নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার পূর্ব হাসনাবাদ এলাকায়। তার বাবার নাম আনোয়ার হোসেন ভূঁইয়া। তবে তার জন্ম ও বেড়ে ওঠা রাজধানীর গুলশাল ও মিরপুর-১০ এলাকায়। তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে সবার বড় জুনায়েদ। বোন দুই বছর আগে মারা গেছে। নিজ জেলা মনোহরদী উপজেলার গাবতলীর হাফসা আক্তার সঙ্গে বিয়ের পর মিরপুর-১০ জুটপট্টি জল্লাদখানা এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন তিনি। সেখানে ব্যাটারিচালিত রিকশা চালিয়ে পুরো পরিবার চালাতেন জুনায়েদ।</p> <p style="text-align:justify">এদিকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের কারণে সরকারি, বেসরকারি অফিস ও কলকারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়। সীমিত হয়ে আসে মানুষের চলাফেরা। বেকার হয়ে পড়েন রিকশাচালক জুনায়েদ। আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে শিক্ষার্থীদের মৃত্যুর ঘটনা তার হৃদয় স্পর্শ করে। এরপর বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে জুনায়েদ ও তার একাধিক সহকর্মী যোগ দেন।</p> <p style="text-align:justify">জুনায়েদের স্ত্রী হাফসা আক্তার বলেন, গত ২৫ জুলাই আন্দোলনে গিয়ে টিয়ার গ্যাস ও পায়ে গুলিবিদ্ধ হন জুনায়েদ। হাসপাতালে না গিয়ে নিজেই পায়ের গুলি বের করেন। বাড়িতে থেকেই চিকিৎসা নেন। কিছুটা সুস্থ হলে আবারও আন্দোলনে যান। </p> <p style="text-align:justify">হাফসা আরো বলেন, ‘বাসা থেকে বের হওয়ার সময় আমার স্বামী বলেছিলেন, ছাত্ররা যদি আন্দোলন করতে পারে, আমি ঘরে বসে থাকব কেমনে। আমিও আন্দোলনে যাব। দরকার হলে শহীদ হব। দেশের জন্য জীবন দিয়া দেব।’ </p> <p style="text-align:justify">হাফসা আক্তার বলেন, ‘একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন আমার স্বামী। মেয়েকে নিয়ে বৃদ্ধ শ্বশুরের আশ্রয়ে আছি। বাকি জীবনটা কিভাবে চলবে।’ সমাজের বিত্তবান ও সরকারের সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি।</p> <p style="text-align:justify">জুনায়েদের বাবা আনোয়ার হোসেন ভূঁইয়া জানান, গত ৪ আগস্ট মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বর এলাকায় ছাত্র-জনতার সঙ্গে পুলিশের তুমুল সংঘর্ষ হয়। সেখানে ছিলেন জুনায়েদসহ তার বন্ধুরা। এক পর্যায়ে তার বন্ধুরা সেখান থেকে চলে আসেন। কিন্তু সেখানে অবস্থান করেন তিনি। সে সময় জুনায়েদ তার বন্ধুদের বলেন, ‘আমার ভাইয়েরা যদি রাস্তায় রক্ত দিতে পারে, তবে আমি কেন পারব না।’ </p> <p style="text-align:justify">জুনায়েদের বাবা জানান, ওই দিন দুপুর ২টার দিকে পুলিশের ছোড়া গুলি লাগে জুনায়েদের মাথায়। রক্তাক্ত অবস্থায় তিনি রাস্তায় পড়ে থাকেন। পরে উদ্ধার করে আগারগাঁও এলাকায় একটি হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করানো হয়। সেখানে রাত ১টার দিকে তার মৃত্যু হয়।</p>