<p>ফরিদপুরের সদরপুরে সাবেক জেলা প্রশাসক (ডিসির) নাম ভাঙিয়ে অবৈধভাবে ফসলি জমির মাটি খুঁড়ে বালু উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে উপজেলা চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী ও আওয়ামী লীগ নেতা কুদ্দুস কাজীর বিরুদ্ধে। </p> <p>অভিযোগ স্বীকার করে কুদ্দুস কাজী জানান, তিনি সাবেক জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদারের কাছ থেকে অনুমতি নিয়েই বালু তুলছেন। এ বিষয়ে সদরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও সহকারী কমিশনার ভূমি অবগত আছেন।</p> <p>বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন-২০১০ অনুযায়ী ভূ-গর্ভস্থ বা নদীর তলদেশ থেকে বালু, মাটি তোলা, পরিবহন, বিপণন ও সরবরাহ নিষিদ্ধ। তবে কেউ যদি ইজারা নেন, তাহলে ইজারার শর্ত অনুযায়ী নির্দিষ্ট পরিমাণ বালু ইজারাদার তুলতে পারবেন। অনুমতি ব্যতিরেকে বালু বা মাটি উত্তোলন করিলে সেই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী ব্যক্তিবর্গ (এক্সিকিউটিভ বডি) বা তাহাদের সহায়তাকারী কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাগণ অনূর্ধ্ব দুই বছর কারাদণ্ড বা সর্বনিম্ন ৫০ হাজার টাকা থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন এবং উক্ত অপরাধে ব্যবহৃত ড্রেজার, বালু বা মাটিবাহী যানবাহন বা সংশ্লিষ্ট সামগ্রী সরকারের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত হবে। এই আইনের অধীন অপরাধ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক ভ্রাম্যমান আদালত বা বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বিচার হবে।</p> <p>এর আগে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধে জেলা ও মাঠ প্রশাসনকে চিঠি দিয়েছে মন্ত্রীপরিষদ বিভাগ। নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। <br /> স্থানীয়রা জানায়, সদরপুর উপজেলার সদর ইউনিয়নের সতের রশি এলাকার কাজী কুদ্দুস ড্রেজার মেশিন দিয়ে পিকনিক স্পট বানানোর কথা বলে দিনের পর দিন উপজেলার আকোটের চর ইউনিয়নের তালতলা ব্রিজ সংলগ্ন কাচারী ডাঙ্গী এলাকায় ড্রেজার মেশিন ও ভেকু দিয়ে ফসলি জমির মাটি ও বালু তুলছেন।</p> <p>সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পদ্মা ফান্টাসটিক পার্ক রিসোর্ট অ্যান্ড পিকনিক সেন্টার নামে একটি সাইনবোর্ড লাগিয়ে রাখা হয়েছে বালু ও মাটি কাটার স্থান থেকে কয়েক মিটার দূরে। সাইনবোর্ড থেকে কিছুটা সামনে গেলেই দেখা যায়, একে একে দুইটা ড্রেজার মেশিন একটি পুকুরের মধ্যে চলছে। এর আগে যে জায়গা থেকে মাটি বিক্রি করা হয়েছিল সেখানে বালু দিয়ে ভরাট করা হচ্ছে। </p> <p>এ সময় উপস্থিত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ড্রেজার চালক বলেন, ‘এখানে আমি রোজ হিসেবে কাজ করি, কুদ্দুস ভাই যেভাবে বলেন সেভাবেই ড্রেজার চালাই। এর আগে ভেকু দিয়ে মাটি কেটে বিক্রি করা হয়েছে এইখান থেকে এখন সেই জায়গা বালু দিয়ে ভরাট করে আবার বালু বিক্রি করা হবে।</p> <p>অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ নেতা কাজী কুদ্দুস বলেন, ‘আমি ডিসির অনুমোদন নিয়েই ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু কাটছি, কাজ শেষ হতে আরো সপ্তাহ খানেক সময় লাগবে। ফরিদপুর জেলা মধ্যে ডিসি চারজনকে অনুমোদন দিয়েছে ড্রেজারের- এর মধ্যে আমি একজন। চাইলে অনুমতির কাগজ দেখাতে পারি।’ </p> <p>কিন্তু অনুমতির কাগজ দেখানোর জন্য তাকে বলা হলে তিনি তা দেখাতে পারেনি। পরবর্তীতে তাকে কাগজ দেখার বিষয়ে বারবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি।</p> <p>সদরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আল মামুন বলেন, ‘আমি এখানে নতুন জয়েন্ট করেছি। কাজী কুদ্দুস নামে কাউকে ডিসি স্যার বালু বা মাটি কাটার বিষয়ে অনুমোদন দিয়েছে কিনা আমার জানা নেই। আমি খোঁজ খবর নিয়ে অবৈধভাবে মাটি ও বালু বিক্রির যদি করে থাকে সেই বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’</p> <p>অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) রামানন্দ পাল বলেন, ফসলি জমির মাটি বিক্রি ও বালু উত্তোলনে জেলা প্রশাসক কখনোই অনুমতি প্রদান করে না। কিন্ত অনেক সময় বিভিন্ন প্রজেক্টের কথা উল্লেখ করে পুকুর খননের অনুমতি প্রদান করা হয়। তার কি ধরনের অনুমতি আছে, দেখে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।</p>