<p>বিয়ের পরের মাসেই সন্তান সম্ভবা হন মো. খোকন মিয়ার (২৫) স্ত্রী। খুশিতে বাড়িতে খবর পাঠিয়ে আত্মীয়-স্বজনদের মিষ্টি মুখ করানোর জন্য অনুরোধ করেন মাকে। সময় এগিয়ে এলে চিকিৎসক দেখিয়ে জানতে পারেন তিনি কন্যা সন্তানের বাবা হবেন। দুজনে মিলে স্থির করেন নাম হবে খুকুমনি। অপেক্ষায় থাকেন কখন আসবে তার আগত সন্তান। অবশেষে গত চার দিন আগে সন্তানের জন্ম হলেও দেখা হয়নি মুখ। এর আগেই গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হলে বিকেলে সবার সঙ্গে বিজয় মিছিলে গিয়ে পুলিশের গুলিতে নিহত হন। গুলিবিদ্ধ লাশ পড়ে থাকে সড়কে।</p> <p>নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার ধলপা ইউনিয়নের ভুইয়াপাড়া গ্রামের মৃত গোলাম মোস্তফা ছেলে মো. খোকন মিয়া। পরিবার নিয়ে গত প্রায় ১৩ বছর ধরে গাজীপুরে নাউগুড় এলাকায় বসবাস করে আসছিলেন তিনি। তিনি একজন ট্রাকচালক। এই আয় দিয়েই পুরো পরিবার চলত। গত প্রায় ১১ মাস আগে তিনি বিয়ে করেন নিজের গ্রামে পাশে গৌরীপুর উপজেলার মাওহা ইউনিয়নের আমোদপুর গ্রামের আব্দুর রশিদের মেয়ে রানী আক্তারকে। এরপর তিনি নববধূকে নিয়ে যান পরিবারের কাছে। সেখানেই স্ত্রীকে নিয়ে চলছিল সুখের সংসার।</p> <p>স্ত্রী রানী জানান, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় প্রায়ই তার স্বামী ছাত্রদের সঙ্গে মিছিল মিটিংয়ে যেতেন। আন্দোলনের চরম অবস্থার মধ্যে তিনি ট্রাক না চালিয়ে বাসাতেই থাকতেন। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতন হয়েছে খবর পেয়ে দ্রুত তিনি বাইরে বের হন। পরে বিজয় মিছিলে অংশগ্রহণ করেন। একসময় তিনি খবর পান বিজয় মিছিলে গুলি করা হয়েছে। এতে অনেকেই হতাহত হয়েছেন। এ সময় স্বামীর মোবাইলে একাধিকবার ফোন দিয়েও কোনো সাড়া না পেয়ে অনেকের কাছ থেকে স্বামীর খোঁজ নিতে থাকেন। কিন্তু দীর্ঘ সময় পার হলেও কেউ কিছু জানায়নি। পরক্ষণেই খবর আসে, অনেকের সঙ্গে তার স্বামী গুলিবিদ্ধ হয়ে সড়কে পড়ে রয়েছেন। পরে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ উদ্ধার করে বাসায় আনার পর রাতেই লাশ নিয়ে গ্রামের বাড়িতে চলে যান। পরদিন ৬ আগস্ট নিজ বাড়িতে লাশ দাফন করা হয়।</p> <p>তিনি আরো বলেন, ‘শাশুড়ি-ননদ ছাড়াও পরিবারের আরো পাঁচ সদস্য ছিল স্বামীর আয়ের ওপর। তা ছাড়া তিনি সন্তানসম্ভবা হওয়ার পর আলাদা খরচ ছিল। এতে কঠোর পরিশ্রম করতেন তার স্বামী। সুখেই চলছিল তাদের সংসার। বিশেষ করে সন্তান আসছে, এতে সব সময়ই হাসিখুশি থাকতেন তিনি। প্রতিবেশী ও বন্ধুদের বলতেন, এই তো আর কয়দিন। সন্তান হলে সবাইকে ঢাকঢোল পিটিয়ে দাওয়াত করবেন। কিন্তু তা আর হলো না। গত বুধবার রাতে তিনি কন্যাসন্তানের মা হলেও তার স্বামী আর নেই। আমার স্বামীর নাম খোকন মিয়া, তাই যখন তিনি জানতে পেরেছেন মেয়ে হবে, তখনই নিজের নামের সঙ্গে মিল করে নাম ঠিক করলেন খুকুমনি। এই ডাক আমি অহন কিবায় ডাকবাম?’</p> <p>মা চম্পা বেগম সন্তান হারিয়ে এখন পাগলপ্রায়। তিনি বলেন, ‘আমি অহন কারে লইয়া বাঁচবাম, বিনা দোষে আমার ছেড়ারে মারল কেরে? এই জবাব আমি কার কাছে চাইয়াম? তার সন্তানের কাছে তো আমি যাইতাম পারি না। সন্তানের দিকে চাইলেও আমার সোনার ধনরে দেহা যায়। কইলজা ফাইট্টা যায়।’ এ সময় কাঁদতে কাঁদতে ডাকতে থাকেন- ‘আয় খোকন আমার কাছে আয়।’</p>