<p>জামালপুরের মেলান্দহে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জেনারেটর থাকলেও তেলের অভাবে চালু হচ্ছে না। ওয়ার্ডের পাশেই শৌচাগারের দরজা খুললেই আসে দুর্গন্ধ বের। এতে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। তীব্র লোডশেডিংয় ও গরমে রোগীদের হাঁসফাঁস অবস্থার পাশাপাশি রাতেও কখনো কখনো অন্ধকারে কাটাতে হয়।</p> <p>উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, সরকারিভাবে জ্বালানি তেলের বরাদ্দ না থাকায় জেনারেটর চালানো যাচ্ছে না। এমনকি জেনারেটর চালানোর লোকবলও নেই। দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থাকায় জেনারেটরটির যন্ত্রাংশ বিকল হয়ে ছিল। পড়ে কিছু দিন আগে জেনারেটর সচল করা হয়েছে। তবে সৌরবিদ্যুতের ব্যবস্থা থাকলেও ব্যাটারি পাওয়ার কমে যাওয়ায় এখন আর তেমন কাজে লাগে না।</p> <p>খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এক লাখ মানুষ অধ্যুষিত এ জনপদের চিকিৎসা সেবার একমাত্র ভরসাস্থল ৫০ শয্যা বিশিষ্ট সরকারি এই হাসপাতাল। তবে এ হাসপাতালের জেনারেটরটি দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ চালু হয় না।</p> <p>সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বহির্বিভাগে চিকিৎসা নেওয়ার জন্য রোগীদের দীর্ঘ লাইন। আর অন্তর্বিভাগে রোগীদের ভিড়। ওয়ার্ড ঘুরে দেখা যায়, গত কয়েকদিনে তুলনামূলক রোগীর সংখ্যা বেড়েছে তাই বারান্দায় বিছানায় শুয়ে চিকিৎসা দিচ্ছে রোগীরা। পুরুষ ও ওয়ার্ডের পাশেই শৌচাগার। শৌচাগারের দরজা খুললেই দুর্গন্ধ বের হচ্ছে।</p> <p>রোগীর স্বজনরা জানান, বিদ্যুৎ যখন চলে যায় তখন তীব্র গরমে অতিষ্ঠ উঠে রোগীরা। প্রতিদিন রাতে কয়েকবার বিদ্যুৎ চলে যায়। প্রতিবারে আধা ঘণ্টার বেশি লোডশেডিং হচ্ছে। হাসপাতালে এসে সুস্থ হওয়ার চেয়ে গরমে আরো বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ছেন রোগীরা। রোগীদের স্বস্তির জন্য যা হাতের কাছে পাচ্ছেন তা নাড়িয়েই বাতাস দেওয়ার চেষ্টা করছেন।</p> <p>হাসপাতালের বারান্দায় চিকিৎসা নেওয়া মিন্টু মিয়া বলেন, বিদ্যুৎ না থাকলে ফ্যান-বাতি বন্ধ হয়ে যায়, তখন অসম্ভব কষ্ট হয়। সাড়া রাতে প্রায় পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টায় কারেন্ট থাকে না। এতে আমাদের খুব কষ্ট হয়। বাতিও বন্ধ হয়ে যায়। বড় একটা ওয়ার্ডে শুধুমাত্র ২টা বাতি জ্বলে কারেন্ট গেলে তাও সামান্য একটু আলো হয়। আর বারান্দায় কারেন্ট গেল কোনো আলোই থাকে না।</p> <p>নারী ওয়ার্ডের এক রোগীর স্বজন নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘দুইদিন আগে হাসপাতালে রোগীকে ভর্তি করিয়েছি। প্রতিদিন-ই রাতে বিদ্যুৎ চলে যায়। তখন ছোট একটা মোবাইলের লাইট জ্বালিয়ে রাখতে হয়। মোবাইলের লাইট ধরে রোগীকে খাবার খাওয়াইছি। গত কয়েক দিন ধরে কারেন্ট খুব সমস্যা করছে। রাতে গরমে খুব কষ্টের মধ্যেই রয়েছি।’</p> <p>বাবর আলী নামে রোগী বলেন, ‘নোংরা টয়লেটের দুর্গন্ধের কারণে যেতে হয় নাক চেপে। টয়লেটের সবখানে মলমূত্র। রোগীদের তো দূরে থাক, সুস্থ লোকও এসব টয়লেটে গেলে অসুস্থ হয়ে যাবে। বিছানার ফোমও নষ্ট হয়ে পচে গেছে। টয়লেটের দুর্গন্ধ ওয়ার্ডে থাকা যায় না।’</p> <p>উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. সাইফুন নাহার বলেন, ‘দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় জেনারেটর বিকল হয়ে পড়েছিল। পরে জেনারেটর সচল করা হয়েছে। তবে তেলের বরাদ্দ না থাকায় জেনারেটর চালু করা হয় না। আর হাসপাতালে শুধুমাত্র দুই জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী রয়েছেন। তারা সব সময় কাজ করছেন। রোগীরাও সচেতন হলে অনেকটাই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা থাকবে।’</p> <p>উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. গাজী মো. রফিকুল হক বলেন, ‘আমাদের নিজ অর্থায়নে জেনারেটর সচল করা হয়েছে। তবে আমাদের তেল খরচের বরাদ্দ নেই।’</p>