<p>নোয়াখালী ছাড়া অন্য ১০ জেলার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। তবে কবলিত এলাকায় বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্যসংকট মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। প্রয়োজনের তুলনায় কম ত্রাণসামগ্রী দেওয়া হচ্ছে। অনেক দুর্গত এলাকার মানুষ কোনো ত্রাণ পায়নি বলে অভিযোগ।</p> <p>এদিকে পানি নামতে শুরু করায় রাস্তাঘাটের ক্ষত ফুটে উঠছে। অনেক কষ্টে বাড়ি ফিরে পড়তে হচ্ছে আরেক ভোগান্তিতে। ভেঙে যাওয়া বাড়িঘর ঠিক করতে যা যা প্রয়োজন তার অনেক কিছুই পাওয়া যাচ্ছে না। শিগগিরই স্বভাবিক অবস্থা ফিরছে না।</p> <p>সব মিলিয়ে পানি কমলেও দুর্ভোগ বাড়ছে বন্যাকবলিত এলাকায়। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:   </p> <p><strong>কুমিল্লা ও চৌদ্দগ্রাম : </strong>কুমিল্লা জেলার বন্যা পরিস্থিতির সামান্য উন্নতি হয়েছে। তবে গোমতী নদীর পানি কমেছে। গতকাল বিকেলে পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, বর্তমানে বিপৎসীমার তিন সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে এ নদীর পানি।</p> <p>যেটি সোমবার ছিল বিপৎসীমার ৪২ সেন্টিমিটার ওপরে। এ ছাড়া ২২ আগস্ট সর্বোচ্চ বিপৎসীমার ১৩৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয় পানি। গোমতীর পানি কমলেও জেলার ১৭টি উপজেলার মধ্যে ১৪টিতেই বন্যা এখনো ভয়াবহ রূপ ধারণ করে আছে। চারদিকে দুর্ভোগ আর হাহাকার। বিশেষ করে বানের পানিতে তলিয়ে থাকা মনোহরগঞ্জ ও নাঙ্গলকোট উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ। ওই দুই উপজেলায় বানভাসি মানুষের মধ্যে ত্রাণ ও বিশুদ্ধ পানির চরম সংকট রয়েছে।</p> <p>এদিকে ২২ আগস্ট রাতে বুড়িচং উপজেলার বুড়বুড়িয়া এলাকায় গোমতী নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধের ভাঙনের স্থান দিয়ে এখনো লোকালয়ে পানি প্রবেশ করছে। এতে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। বুড়িচং ও পাশের ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলায় এখনো লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। এসব এলাকায় দেখা দিয়েছে তীব্র খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকট। এ ছাড়া জেলার প্রতিটি বন্যাদুর্গত এলাকায় নৌযানের রয়েছে তীব্র সংকট। যার কারণে ত্রাণসামগ্রী সমবণ্টন হচ্ছে না বলে জানিয়েছে বানভাসিরা।</p> <p>এদিকে চৌদ্দগ্রাম উপজেলার কাঁকড়ি ও ডাকাতিয়া নদীর পানি কিছুটা কমলেও লোকালয়ের পানি খুবই ধীরগতিতে নামছে। আবার পাশের উপজেলা নাঙ্গলকোট থেকে পানি এসে কয়েকটি প্লাবিত গ্রামে পানি বেড়েছে।</p> <p><strong>নোয়াখালী : </strong>নোয়াখালী জেলায় বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। গত সোমবার রাতভর বর্ষণের পাশাপাশি উজান থেকে নেমে আসা পানিতে গতকাল জেলার আট উপজেলা প্লাবিত হয়েছে। সুপেয় পানি ও খাদ্যসংকট চরম আকার ধারণ করেছে। মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে বন্যাকবলিত এলাকার মানুষকে। গতকাল বেগমগঞ্জ ও সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে এ চিত্র দেখা গেছে।</p> <p>জেলার অন্যতম বৃহৎ উপজেলা বেগমগঞ্জের চৌমুহনী পৌরসভাসহ ১৬টি ইনিয়নের উঁচু রাস্তাঘাট ব্যতীত সব গ্রামের মানুষ পানিবন্দি। স্বাভাবিক সময়ে যে গ্রামীণ সড়কে গাড়ি চলত সেখানে এখন নৌকা ছাড়া চলাচল করা যায় না। যারা আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে পারেনি তারা কোনো রকমে ঘরে চৌকি উঁচু করে কষ্টে দিন পার করছে। চুলা জ্বালাতে না পারায় অনেককে শুকনা খাবার খেয়ে থাকতে হচ্ছে।</p> <p><strong>ফেনী : </strong>ফেনীর শহরতলি ও জেলার বিভিন্ন এলাকায় বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। আবার অনেক স্থানে ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছে দুর্গতরা। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত ত্রাণ দেওয়া হচ্ছে দাবি করা হলেও অনেক এলাকার পানিবন্দি মানুষ তেমন কোনো খাবার পাচ্ছে না বলে অভিযোগ। সদর উপজেলার লস্করহাট এলাকার বাসিন্দা সাংবাদিক রাশেদুল হাসান বলেন, এখনো লস্করহাট, সাহাপুর এলাকায় বুক সমান পানি। কয়েক হাজার মানুষ বাজারের ভবনগুলোতে আটকে আছে। তাদের কাছে তেমন কোনো খাবার ও পানি পৌঁছেনি। তিনি জানান, ওই এলাকার বড় মাদরাসায়ও অর্ধশত পরিবার আটকে আছে।</p> <p>খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সদর উপজেলার সাতসতি এলাকায় সপরিবারে ছয় দিন পানিবন্দি দিন কাটে ২৫ বছর বয়সী শহীদের। গতকাল সকালে বুকস মান পানি সাঁতরে আরেক ভাই শাহাদাত হোসেনকে নিয়ে জেলা শহরে পৌঁছেন। পরিবার ও প্রতিবেশীদের জন্য খাবারের খোঁজে ছুটে বেড়ান এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায়। শহীদুল জানান, কয়েক দিন ধরে শুধু পানি খেয়ে বেঁচেছিলেন। এখনো বাড়ির সবাই উপোস। কেউ কোনো ত্রাণ পায়নি।</p> <p>ফুলগাজী উপজেলার মাইজগ্রামের বাসিন্দা সালমা তিন বছর বয়সী সন্তানকে নিয়ে বাড়িসংলগ্ন উত্তর জামে মসজিদের দ্বিতীয় তলায় ছয় দিন আশ্রয়ে ছিলেন। পানি কমায় ফেনী শহরে স্বামীর বাড়ি ফেরেন। তিনি বলেন, ‘মসজিদে দুই শতাধিক নারী-পুরুষের সঙ্গে আশ্রয়ে ছিলাম। ছয় দিন ধরে পেটে দানাপানি পড়েনি। ঘরে থাকা বিস্কুট দিয়ে বাচ্চা সামাল দিয়েছি।’</p> <p><strong>হবিগঞ্জ : </strong>খোয়াই, কুশিয়ারাসহ বিভিন্ন নদ-নদীর পানি কমার পর লোকালয়ের পানিও কমেছে। ফলে আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা লোকজন ফিরে গেছে বাড়িতে। কিন্তু বিশুদ্ধ পানীয়জলের অভাব, বাসস্থান বসবাসের অনুপযুক্ত ও খাদ্যসংকটে রয়েছে মানুষ। নতুন করে দেখা গিয়েছে বিভিন্ন রোগবালাই। বন্যাকবলিত গ্রামগুলোতে পানিবাহিত বিভিন্ন রোগ ছড়িয়ে পড়ছে।</p> <p><strong>মিরসরাই (চট্টগ্রাম) : </strong>অধিকাংশ ঘর থেকে পানি নামলেও উঠানে ও গ্রামীণ সড়কে পানি জমে থাকায় স্বাভাবিক জীবনযাপনে ফিরতে পারছে না মানুষ।</p>