<p>সুরা কাহফ দাজ্জাল ও দাজ্জালি ফিতনার সঙ্গে খুব ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। আবু দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সুরা কাহফের প্রথম ১০ আয়াত মুখস্থ করবে সে দাজ্জালের ফিতনা থেকে নিরাপদ থাকবে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৮০৯)</p> <p>নাওয়াস বিন সামআন (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের যে কেউ দাজ্জালের সময়কাল পাবে সে যেন সুরা কাহফের প্রথমোক্ত আয়াতগুলো পাঠ করে। সে ইরাক ও সিরিয়ার মধ্যপথ থেকে আবির্ভূত হবে। সে ডানে-বাঁয়ে দুর্যোগ সৃষ্টি করবে। হে আল্লাহর বান্দারা! তোমরা অটল থাকবে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২৯৩৭)</p> <p>উপরোক্ত হাদিসদ্বয় থেকে প্রতীয়মান হয়, রাসুলুল্লাহ (সা.) এই বরকতময় সুরাকে দাজ্জালের যুগের সঙ্গে একটি বিশেষ সম্বোধন দিয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছেন। তাই আবশ্যক হলো নবুয়তের আলোকে এ সুরা অধ্যয়ন করা।</p> <p>দাজ্জাল হলো এক ব্যক্তি এবং একটি ফিতনা বা সিস্টেম। সুরা কাহফে এই সিস্টেমের উপাদানগুলোর আত্মপ্রকাশ লক্ষণীয় বিষয়। সে জন্য এমন দৃষ্টিভঙ্গি থাকা উচিত, যা ঐশ্বরিক শিক্ষার গভীরে প্রবেশ করতে পারে।</p> <p>সুরা কাহফে তিন ধরনের শিরকের উল্লেখ রয়েছে। যেগুলো সরাসরি দাজ্জালি ফিতনার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে মিশে আছে। আর সাম্প্রতিক সময়ে সেগুলো খুবই ব্যাপকতা লাভ করেছে। নিম্নে বিশদভাবে তা উল্লেখ করা হলো—</p> <p>আসহাবে কাহফের গল্পের শেষাংশে আল্লাহ তাআলা বলেন : ‘তিনি কাউকেও নিজ কর্তৃত্বের শরিক করেন না।’ (সুরা : আল কাহফ, আয়াত : ২৬)</p> <p>এই সুরায় বর্ণিত এক ঘটনায় ধনবান ঈমানদার বলেছেন, ‘তিনিই আল্লাহ, আমার প্রতিপালক এবং আমি কাউকেও আমার প্রতিপালকের শরিক করি না।’ (সুরা : আল কাহফ, আয়াত : ৩৮)</p> <p>অন্যদিকে একজন ঈমানহীন অকৃতজ্ঞ (ব্যক্তি) আফসোস করে বলেছিল : ‘হায়, আমি যদি কাউকেও আমার প্রতিপালকের শরিক না করতাম!’ (সুরা : আল কাহফ, আয়াত : ৪২)</p> <p>সুরা কাহফের শেষে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘অতএব, যে ব্যক্তি তার পালনকর্তার সাক্ষাৎ কামনা করে, সে যেন সত্কর্ম সম্পাদন করে এবং তার পালনকর্তার ইবাদতে কাউকে শরিক না করে।’ (সুরা : আল কাহফ, আয়াত : ১১০)</p> <p>উপরোক্ত আয়াতগুলো দ্বারা বোঝা যায়, আল্লাহ তাআলার সঙ্গে শরিক বা শিরক করতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। </p> <p>নিম্নে সুরা কাহফ পাঠের কয়েকটি বিশেষত্ব তুলে ধরা হলো-</p> <p>আল্লাহর রহমত বর্ষণ : হাদিসের বর্ণনা অনুসারে সুরা কাহফ তিলাওয়াতের অন্যতম ফজিলত হলো, তা পাঠ করলে মহান আল্লাহর বিশেষ রহমত অবতীর্ণ হয়। বারা বিন আজিব (রা.) বর্ণনা করেছেন, এক ব্যক্তি (নামাজে) সুরা কাহফ তিলাওয়াত করছিল। তখন বাড়ির একটি চতুষ্পদ জন্তু লাফাতে শুরু করে। অতঃপর সে সালাম বলল। তখন কুয়াশা বা একখণ্ড মেঘ তাকে আবৃত রাখে। বারা বিন আজিব (রা.) বর্ণনা করেছেন যে সে বিষয়টি রাসুল (সা.)-এর কাছে বর্ণনা করেন। তিনি তাঁকে বলেন, ‘হে অমুক, তুমি সুরাটি তিলাওয়াত করো। কারণ এটি আল্লাহর রহমত বা প্রশান্তি, যা কোরআন তিলাওয়াতের কারণে অবতীর্ণ হয়েছিল।’ (বুখারি, হাদিস : ৩৬১৪; মুসলিম, হাদিস : ৭৯৫)</p> <p>আকাশ থেকে ভূপৃষ্ঠ পর্যন্ত আলোকিত : বিশেষ করে জুমার দিন এই সুরা তিলাওয়াতের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। হাদিসের বর্ণনা অনুসারে জুমাবার সপ্তাহের শ্রেষ্ঠতর দিন। সুরা কাহফ তিলাওয়াত এই দিনের অন্যতম আমল। মুআজ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সুরা কাহফের শুরু ও শেষ তিলাওয়াত করবে তার পায়ের নিচ থেকে মাথা পর্যন্ত নূর প্রজ্জ্বলিত হবে। আর যে ব্যক্তি পুরো সুরা তিলাওয়াত করবে তার জন্য আসমান থেকে জমিন পর্যন্ত নূর প্রজ্জ্বলিত হবে।’ (মুসনাদে আহমদ : ৪৩৯/৩)</p> <p>জুমার নামাজে বিশেষ সওয়াব : সালমান ফারসি থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করল, সাধ্যমতো পবিত্র হলো, তেল ব্যবহার করল, ঘর থেকে সুগন্ধি ব্যবহার করল, অতঃপর মসজিদে এলো, সেখানে দুজন মুসল্লির মধ্যে ফাঁক করে সামনে এগিয়ে যায় না, নির্দিষ্ট পরিমাণ নামাজ পড়ল, অতঃপর ইমাম কথা শুরু করলে চুপ থাকল; তাহলে আল্লাহ তাআলা তাঁর দুই জুমার মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহ মাফ করবেন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৮৮৩)</p> <p>পুরো সপ্তাহের গুনাহ মাফ : কিয়ামতের দিন এই সুরা তার পাঠকারীকে আলোকিত করবে। ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন সুরা কাহফ পড়বে, তার পায়ের নিচ থেকে আসমান পর্যন্ত নুর প্রজ্জ্বলিত হবে এবং কিয়ামতের দিন তার জন্য উজ্জ্বল হবে। আর দুই জুমার মধ্যবর্তী সব গুনাহ ক্ষমা করা হবে।’ (তাফসিরে ইবনে কাসির : ৬/৩৯৮)</p> <p>সপ্তাহ ব্যাপী নুর হয়ে থাকবে : কেউ প্রতি জুমায় এই সুরা তিলাওয়াত করলে এক জুমা থেকে অন্য জুমার মধ্যবর্তী সময় তার জন্য নুর প্রজ্জ্বলিত করে রাখা হয়। আবু সাইদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন সুরা কাহফ তিলাওয়াত করবে, তার জন্য দুই জুমা পর্যন্ত নূর প্রজ্জ্বলিত হবে।’ (সুনানে দারিমি, হাদিস : ৩৪০৭)</p> <p>সুরা কাহাফ পাঠে দাজ্জাল থেকে সুরক্ষা : এই সুরা পাঠ করার মাধ্যমে দাজ্জালের ফেতনা থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। আবু দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সুরা কাহফের প্রথম ১০ আয়াত মুখস্থ করবে সে দাজ্জালের ফিতনা থেকে রক্ষা পাবে।’ (মুসলিম, হাদিস : ৮০৯)</p> <p>যেসব আয়াত পাঠে রয়েছে বিশেষ মর্যাদা : হাদিসে বর্ণিত আয়াতগুলো অর্থাৎ শুরুর ১০টি বা শেষের ১০টি আয়াত পড়া যেতে পারে। পারলে পুরো সুরা মুখস্থ করা উত্তম। অন্য হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি সুরা কাহফের শেষ ১০ আয়াত পড়বে সে দাজ্জালের ফিতনা থেকে রক্ষা পাবে।’ (মুসনাদে আহমদ, ৪৪৬/৬)</p> <p>আরেক বর্ণনায় এসেছে, ‘যে ব্যক্তি সুরা কাহফের ১০ আয়াত পড়বে সে দাজ্জালের ফিতনা থেকে রক্ষা পাবে।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৮৮৬)</p> <p>মহান আল্লাহ আমাদের তার নির্দেশনা অনুসারে জীবন যাপন করার তাওফিক দিন। </p>