<p style="text-align:justify">জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টের দেওয়া ১০ বছরের সাজা স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগ। এ রায়ের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়াকে আপিলের অনুমতি দিয়ে সোমবার এই আদেশ দেন জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতির আপিল বেঞ্চ। </p> <p style="text-align:justify">এর আগে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিচারিক আদালত খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছিলেন। আপিলের রায়ে হাইকোর্ট সাজা বাড়িয়ে তাকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেন। এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন (লিভ টু আপিল) করেছিলেন খালেদা জিয়া। এই আবেদনটি মঞ্জুর করে আদেশ দিলেন সর্বোচ্চ আদালত। </p> <p style="text-align:justify">এর আগে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার লিভ টু আপিলের দ্রুত শুনানি করতে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে এবং জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা আপিলের পেপারবুক তৈরির অনুমতি চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেছিলেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। গত ৩ নভেম্বর দুটি আবেদনই মঞ্জুর করেন আদালত। সেই ধারাবাহিকতায় রবিবার খালেদা জিয়ার লিভ টু আপিলটি আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় উঠলে আদালত আদেশের জন্য রেখেছিলেন। </p> <p style="text-align:justify">আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন ও ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. আসিফ হাসান। </p> <p style="text-align:justify">খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা বরাবরই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছিলেন। তারা বলে আসছিলেন, ট্রাস্টের এক টাকাও আত্মসাৎ বা তছরুপ হয়নি। নির্ধারিত ব্যাংক হিসাবে টাকা জমা আছে। লিভ টু আপিলের শুনানিতে সেই কথাই বলেছেন দুদকের আইনজীবী মো. আসিফ হাসান। </p> <p style="text-align:justify">তিনি আদালতকে বলেন, ‘এই ট্রাস্টের টাকা কিন্তু আত্মসাৎ হয়নি। জাস্ট ফান্ডটা (তহবিল) মুভ (স্থানান্তর) হয়েছে। তবে সুদে আসলে অ্যাকাউন্টেই টাকাটা জমা আছে। কোনো টাকা ব্যায় হয়নি।’</p> <p style="text-align:justify">আদেশের পর আইনজীবী জয়নুল আবেদীন সাংবাদিকদের বলেন, ‘লিভ টু আপিল মঞ্জুর করে আদালত বিএনপির চেয়ারপরসনকে আপিলের অনুমতি দিয়েছেন। এই আপিল নিষ্পত্তি পর‌্যন্ত হাইকোর্টের রায়ের কার‌্যকারীতা স্থগিত করা হয়েছে। অর্থাৎ হাইকোর্টের দেওয়া ১০ বছরের সাজা স্থগিত থাকবে। আর আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে আপিলের সারসংক্ষেপ তৈরি করতে বলা হয়েছে। আশা করছি দুই সপ্তাহের মধ্যেই আমরা সারসংক্ষেপ জমা দিতে পারবো। এরপর মূল আপিল শুনানির আবেদন করা হবে। এখন বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করছে। সরকারের কোনো হস্তক্ষেপ নাই বলে আমরা মনে করি। ফলে আপিলটি দ্রুত শুনানি করতে পারবো বলে আমরা আশা করছি।’</p> <p style="text-align:justify">অনাথ শিশুদের জন্য অনুদান হিসেবে আসা দুই কোটি ১০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২০০৮ সালে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও তার বড় ছেলে তারেক রহমানসহ আরও চার জনের বিরুদ্ধে রাজধানীর রমনা থানায় মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন। ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ আখতারুজ্জামান এ মামলার রায় দেন। রায়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। খালেদা জিয়ার বড় ছেলে ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান, সাবেক সাংসদ কাজী সালিমুল হক কামাল, সাবেক মুখ্য সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ ও মমিনুর রহমানকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। রায়ে খালেদা জিয়াসহ ছয় আসামির সবাইকে মোট ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা ৮০ পয়সা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। পরে এ রায়ের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়া, কাজী সালিমুল হক কামাল ও শরফুদ্দিন আহমেদ হাইকোর্টে পৃথক আপিল করেন। বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ ২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর রায় দেন। রায়ে সাজা বাড়িয়ে খালেদা জিয়াকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। </p> <p style="text-align:justify">গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের পদক্ষেপে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার সাজা মওকুফ করেন রাষ্ট্রপতি। কিন্তু খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা জানান, দুটি মামলাসহ সমস্ত মামলা তিনি আইনিভাবে মোকাবেলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। </p>