<p>ঢাকা পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ (ওয়াসা)-র ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) পদে প্রতিষ্ঠানটির উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এ কে এম সহিদ উদ্দিনের দায়িত্ব পালনে হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ স্থগিত করা হয়েছে।</p> <p>এ সংক্রান্ত এক আবেদনে শুনানির পর বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) আপিল বিভাগের বিচারপতি মো. রেজাউল হকের চেম্বার আদালত এই আদেশ দেন।</p> <p>আদালতে সহিদ উদ্দিনের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন এবং এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন। রিট আবেদনকারীর পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী সৈয়দ মামুন মাহবুব। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক।</p> <p>আইনজীবী সৈয়দ মামুন মাহবুব কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘হাইকোর্টের স্থগিতাদেশটি স্থগিত করেছেন চেম্বার আদালত। সরকার একটি তালিকা দিয়ে দেখিয়েছে এ কে এম সহিদ উদ্দিনই জ্যেষ্ঠতম উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক। আমরা বলেছি, সর্বোচ্চ আদালতে বিষয়টি মোকাবেলা করা হবে।’</p> <p>এ আদেশের ফলে ঢাকা ওয়াসার এমডি হিসেবে এ কে এম সহিদ উদ্দিনের দায়িত্ব পালনে আপাতত কোনো বাধা থাকছে না বলে জানান এই আইনজীবী।</p> <p>আইনজীবী এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন জানান, হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল আগামী ৪ নভেম্বর শুনানির জন্য রাখা হয়েছে।</p> <p>২০০৯ সালে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) পদে প্রথমবারের মতো নিয়োগ পেয়েছিলেন তাকসিম এ খান। এরপর দফায় দফায় তার মেয়াদ বাড়ানো হয়। সর্বশেষ গত বছরের ১৪ অক্টোবর সপ্তমবারের মতো ওই পদে আরো তিন বছরের জন্য নিয়োগ পান তিনি। দুর্নীতি, অনিয়মসহ নানা অভিযোগ থাকার পরও তাকসিমকে একই পদে দীর্ঘ সময় রাখা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। ২০০৯ সালের পর থেকে ঢাকা ওয়াসার পানির দাম বাড়ে ১৬ বার।</p> <p>গত ১৫ বছরে ঢাকা ওয়াসায় একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন তাকসিম এ খান। ওয়াসার আইন অনুযায়ী, ঢাকা ওয়াসা পরিচালিত হওয়ার কথা বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই বোর্ডকে পাশ কাটিয়ে ঢাকা ওয়াসাকে পরিচালনা করেছেন বিতর্কিত এই ব্যক্তি। এ নিয়ে বোর্ডের চেয়ারম্যানের সঙ্গে দ্বন্দ্বের ঘটনাও ঘটে। এতে তাকসিমের কিছুই হয়নি। বরং তার অনিয়ম, অপচয় ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ দেওয়ায় সরে যেতে হয় সংস্থাটির সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফাকে। ঢাকা ওয়াসার এমডি হিসেবে তাকসিমের মাসিক বেতন ছিল ৬ লাখ ২৫ হাজার টাকা। সর্বশেষ করোনা মহামারির মধ্যে একলাফে ওয়াসার এমডির বেতন বাড়ানো হয়েছিল পৌনে দুই লাখ টাকা।</p> <p>ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ১৪ আগস্ট ওয়াসার এমডি পদ থেকে পদত্যাগ করেন তাকসিম। পরদিন তার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের অবশিষ্ট মেয়াদ বাতিল করে প্রজ্ঞাপন দেয় স্থানীয় সরকার বিভাগ। ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ঢাকা ওয়াসা দ্রুদতম সময়ের মধ্যে পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ আইন, ১৯৯৬-এর বিধান অনুসারে ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগের কার‌্যক্রম গ্রহণ করবে। নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগ না হওয়া পর‌্যন্ত ঢাকা ওয়াসায় কর্মরত জ্যেষ্ঠতম উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সব দায়িত্ব পালন করবেন। কিন্তু জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) এ কে এম সহিদ উদ্দিনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। এ নিয়োগের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন ঢাকা ওয়াসা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আনিসুজ্জামান শাহীন খান। এ রিটে প্রাথমিক শুনানির পর ৫ সেপ্টেম্বর রুলসহ আদেশ দেন উচ্চ আদালত। অন্তবর্তী আদেশে এ কে এম সহিদ উদ্দিনের দায়িত্ব পালনে স্থগিতাদেশ দেওয়ার পাশাপাশি জ্যেষ্ঠতম উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালককে ঢাকা ওয়াসার এমডি নিয়োগ দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়।</p>