<p>নীলফামারীতে সাবেক সংসদ সদস্য ও সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামন নূরের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করা হয়েছে। রবিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) এই মামলাটি করা হয়। এ নিয়ে তার বিরুদ্ধে তিন মামলায় হত্যা, হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ আনা হয়েছে।</p> <p>২০১৪ সালের ১৮ জানুয়ারি জেলা সদরের লক্ষ্মীচাপ ইউনিয়ন বিএনপি নেতা গোলাম রব্বানীকে হত্যার অভিযোগে আদালতে মামলাটি করেন তার স্ত্রী শাহানাজ বেগম। আমলি আদালত-১-এর বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. শাহীন কবির সদর থানাকে এফআইআর হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দেন।</p> <p>এই মামলায় আসাদুজ্জামান নূর ছাড়াও সদর থানার সাবেক ওসি বাবুল আকতার, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি দেওয়ান কামাল আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক মমতাজুল হকসহ নামীয় আসামি ৪১ জন।</p> <p>শাহানাজ বেগমের অভিযোগ, তার স্বামী গোলাম রব্বানী লক্ষ্মীচাপ ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। ২০১৩ সালে সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান নূরের গাড়িবহরে হামলার মিথ্যা একটি মামলায় গোলাম রব্বানীকে আসামী করা হয়। ওই বছরের ১৪ ডিসেম্বর বিকেল ৪টার দিকে নূরের নেতৃত্বে ওসি বাবুল আকতার, এসআই মোস্তাফিজুরসহ নামীয় ও অজ্ঞাতপরিচয় আসামিরা তার (বাদী) স্বামীর খোঁজে লক্ষ্মীচাপ ইউনিয়নের দুবাছুড়ি গ্রামের বাড়িতে গিয়ে তাকে (রব্বানী) না পেয়ে বাড়িঘরে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করে। এ সময় পরিবারের লোকজনকে তুলে নিয়ে ক্রসফায়ারে হুমকি দেওয়া হয়। জীবন রক্ষার্থে গোলাম রব্বানী পঞ্চগড়ের তেতুলিয়া উপজেলার ঠনঠনিয়া গ্রামে এক আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নেন। সেখান থেকে ২০১৪ সালের ১৫ জানুয়ারি সকালে ১৫-১৬ ব্যক্তি নিজেদের পুলিশ ও র‌্যাব পরিচয়ে তাকে তুলে নিয়ে যায়। বিষয়টি জানার পর তিনি স্বামী গোলাম রব্বানীর খোঁজে আসামিদের কাছে গেলে তারা ১৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। এরপর ১৮ জানুয়ারি সকাল ৭টার দিকে জেলা সদরের নীলফামারী-ডোমার সড়ক সংলগ্ন পলাশবাড়ী ইউনিয়নের একটি বাঁশঝাড়ে গোলাম রব্বানীর লাশ দেখতে পায় এলাকার লোকজন।</p> <p>শাহানাজ বেগম বলেন, ‘আমার স্বামীকে হত্যা করে ওই স্থানে ফেলে রাখা হয়েছিল। সেই সময় আসামিরা অনেক ক্ষমতাধর ব্যক্তি ছিলেন। থানা পুলিশ, আইন-আদালত সব তাদের আয়ত্তে ছিল। আমি ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হতাম। এখন দেশে আইন-আদালত নিরপেক্ষ হওয়ায় মামলা করেছি।’</p> <p>এর আগে ৪ আগস্ট বৈষ্যম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে জেলা বিএনপিসহ তার অঙ্গসংগঠনের কার্যালয় ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের অভিযোগে মামলা করা হয়। ৫ সেপ্টেম্বর আদালতে মামলাটি করেন জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আব্দুস সালাম বাবলা। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক সড়ক ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ আসাদুজ্জামান নূরকে আসামি করা হয়। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, সদর থানার সাবেক ওসিসহ মামলার আসামির সংখ্যা ১২৬ জন।</p> <p>অন্যদিকে ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে অবৈধভাবে দেশীয় অস্ত্রসহ আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার, বলপ্রয়োগ ও ১৮ জুলাই থেকে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা-মামলার নামে ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ চাঁদা দাবির অভিযোগে আদালতে আরেকটি মামলা করা হয় আসাদুজ্জামান নূরসহ নামীয় ৬০ জনের বিরুদ্ধে। ১০ সেপ্টেম্বর মামলাটি করেন নীলফামারী বিএম কলেজের ছাত্র জেলা শহরের পূর্ব কুখাপাড়ার শামীম হোসেনের ছেলে মো. সৌমিক হাসান সোহান।</p> <p>নীলফামারীতে সাবেক সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান নূরের বিরুদ্ধে তিনিটি মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে সদর থানার পরির্দশক (তদন্ত) এম আর সাঈদ বলেন, সর্বশেষ (রবিবার) মামলাটির আদালতের আদেশ পেয়েছি। সাত কার্যদিবসের মধ্যে মামলাটি এফআইআর হিসেবে গ্রহণের জন্য আদালতের নির্দেশ আছে। সময়ের মধ্যেই রেকর্ড সম্পন্ন করা হবে। আগের দুটি মামলা সময়ের মধ্যে রেকর্ড করা হয়েছে বলে জানান তিনি।</p>