<p><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">নানুর মাথায় আকস্মিক ভেঙে পড়ল বিরাট এক ঝাড়বাতি। আমি আর নানু তখন পায়ে পা মিলিয়ে সমুদ্রের তীরঘেঁষে সাদা বালুর ওপর দিয়ে হাঁটছি। কোথা থেকে পড়ল ঝাড়বাতি? আমি চিৎকার দিয়ে আকাশের দিকে তাকাই। ঠিক তখনই আমার ঘুম ভেঙে যায়। ঘড়িতে তিনটা বেজে তেইশ মিনিট। বালিশের পাশে রাখা আদরের </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">গীতবিতান</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> বুকে চেপে ধরে অন্ধকারে বসে আমি অন্ধকার দেখি। আলো জ্বালাতে ইচ্ছে করে না। পচা ভাদ্রের ভাপসা গরমে প্রাণ যায় যায় দশা। গরম ছাড়াও দুশ্চিন্তায় শুধু শরীর নয় যেন আত্মাও ঘামছে। অস্বাভাবিক বোধ করি। নানুর কথা মনে পড়ে। জীবনে এমন একজন অপার্থিব নানুর সান্নিধ্য পেয়েছি ভেবে ভয়ের মধ্যেও খুশি লাগে। পৃথিবীকে নানু তাঁর শরীরের একটা  অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ বলতেন। জীবনকে যেমন ব্যাকুল ভালোবাসতেন, পৃথিবীকেও তেমন ভালোবাসতেন।  তিনি মানুষ, প্রকৃতি তথা প্রতিটি প্রাণ ভালোবাসতেন। তিনি চাইতেন মানুষ প্রকৃতির মতো সহজ হোক, জলের মতো বয়ে যাক। তাঁর অন্তরের দয়ালু সৌন্দর্য সদা ফুটে উঠত চোখেমুখে। তাইতো অশীতিপর নানুকে আমার মনে হতো প্রাণবন্ত অষ্টাদশী যুবতির মতন। সুমধুর কুহ স্বরে কোকিলের মতো কথা বলতেন, তাঁর হাসিতে যেন পাহাড়ের চূড়া থেকে শিউলি বৃষ্টি ঝরে পড়ত। তাঁর মুখাবয়বে দেখেছি এক শান্ত নদী, যে নদীর বুকে আকাশের মুখ দেখা যায়।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">নানুর সঙ্গে আমি ঘুমাতাম। ভোরে ঘুম চোখ মেলেই তিনি আমার কপালে আদরের তিলক এঁকে দিতেন। অতঃপর বিছানা ছেড়ে এই ঘর, ওই ঘর, বারান্দায় পায়চারি করতেন। ভোরে </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">গীতবিতান</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> হতে </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আলোর অমল কমলখানি কে ফুটালে, নীল আকাশের ঘুম ছুটালে। আমার মনের ভাবনাগুলি বাহির হলো পাখা তুলি, ওই কমলের পথে তাদের সেই জুটালে</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">...গানটি গলা ছেড়ে গাইতেন। তাঁর মুগ্ধ ডাকে ঘরের সবার ঘুম ভাঙত, নতুন দিনের সূচনা হতো নতুন জীবনীশক্তিতে। তাঁর জীবনের সব শুভ রঙত্ং তিনি ঢেলে দিয়েছেন আমাদের ওপরে।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">নানুর দিকে তাকিয়ে আমার আম্মা প্রায়ই বলতেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মানুষ ছেড়ে যায়, আলো যায় না।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> নানুর মুখে নাকি মামার মুখখানি তিরতির করে কাঁপে, আম্মা সেটি দেখতে পেতেন। আমার একমাত্র মামাকে নানু হারিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধে। একমাত্র পুত্রকে হারিয়ে নানা শোকে স্তব্ধ হয়ে পড়লেও আম্মার মুখে শুনেছি নানুর অন্তর পোড়া গনগনে আগুনের আভা মুখে ফুটে উঠলেও তিনি অনেকটা স্বাভাবিক ছিলেন। ভাবি, ওই সময় নানু স্বাভাবিক না থেকে অন্য কোনো উপায়ও তো ছিল না। হার্টের রোগী নানা এবং একমাত্র কন্যা আমার আম্মাকে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী বিধ্বস্ত সময়টা তাঁর জন্য মোটেও কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না। বেড়ালের মতো রাত-দিন নানুর গায়ের সঙ্গে এলিয়ে থেকে সেসব কঠিন দিনের অনেক গল্পও শুনেছি। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">নানুর মধ্যে মেধা ও প্রতিভার একটা প্রভা ছিল, তার কথা ও কাজে সেটি বিচ্ছুরিত হতো। সোহেল মামা মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হওয়ার পর তাঁর মাথার ওপর আকাশ, পায়ের তলে মাটি ছাড়া ভরসা হিসেবে তেমন কাউকে পাননি। সংসারের ঘানি টেনেছেন একা। তার স্বপ্ন ছিল নানা এবং আম্মা ভালোভাবে বাঁচুক, আর কোনো কষ্ট যেন তাদের ছুঁতে না পারে। তিনি তাদের মাথার ওপর ছাদ হয়ে ছিলেন জীবনভর। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">নানু আমাকে বলতেন, চলার পথে যত প্রলয়ংকরী ঝড় আসুক, সব সময় জীবনকে পছন্দ করবি। জীবনে সুখে থাকার, সুখ বেছে নেওয়ার সবটা দায়িত্ব নিজের, অন্য কারো না। সে জন্য বোধকরি নানু আব্বাকে পছন্দ করেছেন আম্মার জন্য। আব্বার মধ্যে হয়তো নানু তার হারিয়ে ফেলা সন্তানের সুখ পেতেন। আব্বাও ছেলের মতো নানুর যত্ন নিতেন, শ্রদ্ধা করতেন। নানা মারা গেলে নানু গ্রামের বাড়িতে আট মাস একা থেকেছেন। আম্মা শিশুর মতো কেঁদে বারবার চেষ্টা করেও তাকে ঢাকায় আসার জন্য রাজি করাতে পারেননি। আমি চোখেমুখে আতঙ্ক নিয়ে বলেছিলাম, একা বাড়িতে থাকতে আপনার ডর লাগে না নানু? তিনি উত্তরে বলেছেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">একা কোথায়, তোর নানা আছে! মানুষটাকে একা রেখে কিভাবে ঢাকা যাই? প্রতিদিন ঘুম ভেঙেই বাড়ির পূর্ব পাশে গিয়ে ওর সঙ্গে দেখা করি, কথা বলি। একইভাবে দুপুরে-সন্ধ্যায়ও যাই।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আম্মা, আমি কারো অনুরোধই শোনেননি। আমাদের শত অনুনয়-বিনয়ে নিস্পৃহ, বিকারহীন নানু আব্বার শরীর খারাপ শুনেই মাইক্রোবাসে চেপে একাকী ঢাকায় চলে আসেন। তার আগমনে আম্মার ওষ্ঠাগত প্রাণ যেন পানি পেলো। সেই থেকে নানু আমাদের সঙ্গে থেকে গেলেন। আব্বা এবং নানুর মধ্যে সম্পর্ক ছিল গভীরতর, ঠিক পাহাড়ি ঝরনার উৎসর মতো। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আম্মার হু হু কান্নার শব্দে মনের ভাবনা থেকে বের হয়ে বিছানা ছেড়ে নামি দু</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">হাতে জানালার গ্রিল শক্ত করে চেপে ধরি। তার হাউমাউ কান্না যেকোনো মানুষের মর্ম স্পর্শ করবে, আমি তো তার মেয়ে। তখনো ফজরের আজান পড়েনি। জানালার গ্রিল গলে একটা শ্যামল হাওয়া উড়ে এসে ছুঁয়ে যায় আমাকে। বারান্দায় নানুর হাতের যত্নে টবে বেড়ে ওঠা গাছগুলো দুলছে। নানু নেই, কিন্তু তাঁর ছায়া হাওয়ার মতো চুপচাপ আমাদের সঙ্গে সর্বত্র হাঁটছে। এমন ভোরে তিনি আমাকে ডেকে তুলে তার ঝুলবারান্দার বাগান দেখিয়ে বলতেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কোন গাছটা তোর প্রিয়?</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> সর্বদা আমি বেলি ফুলগাছটাই বেছে নিতাম। আমার বন্ধুরা এসেও এই বাগানে হুল্লোড় করত। সবার পছন্দের গাছ তিনি টবে পুঁততেন। নানু বলতেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মানুষ যেমন প্রেমে বাঁচে, যত্ন চায়, গাছও তেমন প্রেম চায়, যত্ন চায়। মানুষের মুখ যেমন বলে দেয় তার পাশের মানুষটা তাকে কেমন প্রেমে, যত্নে রেখেছে, তেমন একেকটা গাছের দিকে তাকালেও বোঝা যায় গাছটি মানুষের কেমন যত্ন, প্রেমে আছে।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">  তিনি গাছগুলোর সঙ্গে কথা বলতেন, কবিতা শোনাতেন, আমি অবাক বিস্ময়ে উপভোগ করতাম। গাছ মানুষকে সহিষ্ণু হতে শেখায়, যত বেশি গাছের সঙ্গে থাকা যায় তত বেশি সহিষ্ণু হওয়া যায়, তার কাছ থেকেই শিখেছি। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">নানুর বাগানে আমি একা দাঁড়িয়ে আছি। অন্তর পুড়ে যাচ্ছে, গাছের সান্নিধ্যে কেন শীতল হতে পারছি না? নানুর মতো গাছগুলোকে প্রেম, যত্ন দিতে পারিনি, তাই হয়তো ওরা আমার অন্তর শীতল করছে না। জগতের সব কিছু চলে দেওয়া-নেওয়ার ভিত্তিতে, যা দেব তাই ফেরত পাব, এটাই প্রকৃতির নিয়ম! নানুর নাম আলো কে রেখেছিলেন, জানা হয়নি। যেখানটায় তিনি ছিলেন সব শুভ আলো সেখানটায় ঝলমল করত। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ফজরের নামাজ শেষ করে আম্মা আমার পাশে এসে দাঁড়ান। তখনো ভোরের আলো ফোটেনি, অচিরেই ফুটবে, আকাশে তেমন ভাব উঠেছে। বিবর্ণ, বিধ্বস্ত আম্মার মুখের দিকে তাকিয়ে বুকটা ছ্যাৎ করে ওঠে। গাছের নরম ডালের মতো মসৃণ চুলগুলো উষ্কখুষ্ক হয়ে আছে, সিঁথিতে পাক ধরেছে। তাঁর অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে বৃষ্টির মতো। কাঁদতে কাঁদতে গত দুই মাসে তাঁর চোখে শ্যাওলা জমেছে। নানু মারা যাওয়ার পর আম্মার ডিমেনশিয়া, ইনসমনিয়া বেড়েছে হু-হু করে। ঘুমের ওষুধ খেয়েও রাত জেগে থাকে। গতকালের ঘটনা আজ ভুলে গেলেও রক্তাক্ত জুলাই-আগস্টে নির্বিচারে ছাত্র হত্যা, সাধারণ মানুষ হত্যার ভয়ংকর ঘটনাগুলো সব মনে রেখেছে। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আমি তাঁকে জড়িয়ে ধরি। কিছু বলি না। মনে হয়, পৃথিবীর প্রাচীন মানুষটা অসহায়ের মতো আমার বুকে থরথর কাঁপছে। ভাষাহীন আমরা কাঁদতে থাকি, কাঁদতেই থাকি। আব্বা এক গ্লাস পানি নিয়ে এসে আম্মাকে খেতে দেয়। লক্ষ করি, পানিটাও যেন তার গলায় ঠেকে ঠেকে যাচ্ছে। একটু চুমুক দিয়ে গ্লাসটা মেঝেতে রেখেই আব্বার ওপর আম্মা ক্ষিপ্র হয়ে ওঠেন। বিদ্যুদ্বেগে আব্বার সামনে গিয়ে ক্রোধোন্মত্ত কণ্ঠে বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তুমি গ্রাম থেকে আমার মাকে কেন ঢাকায় এনেছিলে? গ্রামে থাকলে জুলাইয়ের এমন সহিংসতা, মানুষ হত্যা মা দেখতেন না, তার প্যানিক অ্যাটাক হতো না, মা বেঁচে থাকতেন।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span> </span></span></span></p> <p><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">নানু মারা যাওয়ার পর আম্মার বেসামাল অবস্থা দেখে আমি আর আব্বা চেষ্টা করছি স্বাভাবিক থাকার জন্য,  সোহেল মামাকে হারিয়ে বুকে কষ্ট চেপে নানু যেমন স্বাভাবিক ছিলেন, ঠিক তেমন। আব্বা চুপচাপ নিজের কক্ষে ফিরে যান। আম্মা তখনো তার মতো করে নিজের পাণ্ডুলিপি কাটাছেঁড়া করছেন। নানুর আচমকা মৃত্যুটা তার কাছে অস্বাভাবিক, কোনোভাবেই তাকে শান্ত করতে পারছি না। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ওহ, মাগো!</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> বলে আম্মা কাতরাতে কাতরাতে বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মৃত্যুর আগের দিনও মা নিজ হাতে লালশাক রান্না করেছেন, গোসল শেষে কাপড় ধুয়েছেন, গাছের পরিচর্যা করেছেন। আমার থেকে টাকা নিয়ে তোর বাবাকে দিয়ে পানির কেইস কিনে এনেছেন। ছাত্রদের মিছিলে পানির বোতল দিয়েছেন। এই রক্তাক্ত জুলাই, এত ছাত্র, নিরীহ মানুষের মৃত্যু আমার শক্তপোক্ত মাকে আমার থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে। সুস্থ মা আমার রাতে টেলিভিশনে বীভৎস সব খবর দেখে চিরঘুমে তলিয়ে গেছেন। আমি এতিম হয়ে গেলাম। মা-বাবা, একমাত্র ভাই সবাইকে হারালাম।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মায়ের আত্মগত সংলাপ খসে খসে পড়ছে পাখির পালকের মতো। কিছু বলি না, কিছুই বলতে পারি না আমি। কষ্টে বুকটা চৌচির হয়ে যাচ্ছে। সত্যিই তো, নানুর অকস্মাৎ মৃত্যুর জন্য তো আমিই দায়ী কিংবা আমরাই দায়ী। নানুকে না বলে বন্ধুদের সঙ্গে মিছিলে গিয়েছি, কোনো দিন বাড়িই ফিরিনি, যখন ঘরে ফিরেছি, দেখেছি তার চোখে নৈঃশব্দ্য উপাসনা। জুলাই-আগস্ট শেষ হলেও সেসব শ্বাসরুদ্ধকর উদ্বেগের দিনগুলো মাখামাখি হয়ে ঘুরঘুর করছে আম্মার মস্তিষ্কে, আমার পরিবারে। এই ক্ষত জীবনে কোনে াদিন ঘুচবে কি না, জানি না। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ততক্ষণে সূর্যের আলো ছড়িয়ে পড়েছে ঝরনাধারার মতো। জানালার পর্দা সরিয়ে আম্মাকে বলি, অন্ধকারের পাহাড় ডিঙিয়ে কী সুন্দর নতুন আলো ফুটেছে, দেখো! আম্মা মুখের ওপর তেরচাভাবে হাত রেখে বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> আমার আলো হারিয়ে গেছে। যন্ত্রণাময় ধূসর চার দেয়ালের ফাঁকে এই ঊর্ধ্ব আলোয় আমার ক্ষত শুধুই বাড়ছে রে মা।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span> </span></span></span></p> <p><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আম্মার ক্ষতের পাশে বেলি ফোটা ম ম গন্ধে ডুবে ক্লান্ত আমি দিগন্তে আলো দেখি।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"> </p> <p style="text-align:left"> </p>